মেহেরপুরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবরও আসছে প্রতিদিন। আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছে শিশু-বয়োজ্যেষ্ঠরাসহ সব বয়সীরা।
গত ২৪ ঘন্টায় মেহেরপুরে ৯জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে মেহেরপুর ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শনাক্ত হয়েছে। মুজিবনগরে ১ ও গাংনীতে ২ জন। আক্রান্তরা সকলেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তবে ঈদের পর থেকে এ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও নিজ নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড থেকে জানা গেছে,গতকাল সোমবার ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। যদিও এখানে বেড রয়েছে ১০টি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে আরও ৫ টি সিট ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ১২ জন এবং গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ৪ জন রোগী।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের ৬ তারিখ থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত মেহেরপুরে মোট ৩৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী মেহেরপুরে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মেহেরপুর ২৪০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৩৮ জন। এদের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২২২ জন রোগী, উন্নত চিকিৎসার জন্য ২ জনকে রেফার্ড করা হয়েছে। গতকালকে ভর্তি রয়েছে ১৫ জন রোগী। এদিকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত আক্রান্ত ভর্তি হয়েছিল মাত্র ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। আগস্ট মাসে ভর্তি হন ৫৩ জন রোগী।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল সোমবার পর্যন্ত মোট ভর্তি হন ৭০ জন। গতকাল ভর্তি রয়েছেন ৪ জন রোগী।
মেহেরপুর জেলাতে চলতি বছরের জুন মাসে প্রথম রোগী সনাক্ত হয়। জুলাই মাসে এসে তা বেড়ে যায়।
চলতি মাসের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারিভাবেই ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ শ জন। কিন্তু অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী প্রাইভোট ক্লিনিক ও নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার সংখ্যা সরকারি হিসেবের দ্বিগুন বলে জানান হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা। যা বর্তমানে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র জানিয়েছেন গ্রামের চেয়ে শহরের রোগী সংখ্যা বেশি।
মেহেরপুর ও গাংনী পৌরবাসির অভিযোগ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পৌরসভার দায়িত্বশীলদের গা-ছাড়া ভাবের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ প্রকোপ কমাতে পৌরসভাসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
মেহেরপুর শহরের হালদারপাড়ার বাসিন্দা নাইমউদ্দিন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে খুব আতঙ্কে আছি। চারপাশে অনেকের আক্রান্ত ও মৃত্যুর কথা শুনছি। অন্যান্য বারের চেয়ে ডেঙ্গু এই প্রকোপ এবার বেশি। কয়েক মাস হয়ে গেলেও এখনো কমছে না!
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মখলেছুর বলেন, মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গত ৬ জুন থেকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা পাওয়া শুরু করেছি। এরপর থেকে ১৫ শয্যা বিশিষ্ট ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করেছি। আজ পর্যন্ত ১৫ জন ডেঙ্গু রোগ ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে কোন জটিলতা সৃষ্টি হয়নি। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের এই হাসপাতালে আছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেকেই জেলার বাইরে থেকে আসা। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।