দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর লিঙ্গ হিসেবে হিজড়া সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু ভোটার তালিকা হালনাগাদের পর মেহেরপুরের হিজড়া ভোটারদের নারীতে রূপান্তরিত করেছে জেলা নির্বাচন অফিস।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মেহেরপুরে দুইটি আসনে প্রকাশিত চুড়ান্ত ভোটার তালিকায় দেখা যায় সমগ্র জেলায় হিজড়া ভোটার মাত্র ২ জন। সংখ্যাটি নিয়ে বিভিন্ন মহালে শুরু চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জেলাতে হিজড়ার সংখ্যা নিয়েও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ভেদে রয়েছে অস্পষ্টতা। ভোটার তালিকায় হিজরা সংখ্যা মাত্র ২ জন দেখালেও জেলা পরিসংখ্যান অফিস বলছে হিজড়া সংখ্যা ২৬, হিজড়াদের প্রতিনিধি বলছে মেহেরপুরে তাদের সংখ্যা ২৯ জন, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে বলছে হিজরা সংখ্যা ২৫ আবার তাদের উপকার ভোগীর তালিকায় সংখ্যাটা ৩০ জনের।
ভোটার তালিকা হালনাগাদে এবারই প্রথম হিজড়া ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী কাদের মোঃ ফজলে রাব্বি মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যে সকল হিজরারা প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সরকারি সুবিধা নিয়েছেন জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী সকলের লিঙ্গ হিজড়া। নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় যে সংখ্যাটা দেখানো হচ্ছে সেটা সঠিক নয়। কেন এমন হলো ব্যাখ্যাটা উনারাই দিতে পারবেন। ‘
জেলা পরিসংখ্যান অফিস মেহেরপুরের উপ-পরিচালক মোঃ বছির উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী মেহেরপুর জেলায় মোট হিজড়া’র সংখ্যা ২৬ জন।’
হিজড়াদের পরিচয়ের স্বীকৃতির দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে হিজড়াদের ‘লিঙ্গ পরিচয়কে’ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে এ সংক্রান্ত ‘নীতিমালা অনুমোদন করা হয়।
২০১৪ সালের ভোটার নিবন্ধন বিধিমালা প্রণয়নের সময়ই নির্বাচন কমিশন ‘হিজড়া’র অপশন প্রস্তাবিত নিবন্ধন ফরমে যুক্ত করে। কিন্তু ভোটার তালিকা আইন ও ভোটার তালিকা বিধিমালা সংশোধন না হওয়ায় ইতোপূর্বে তা কার্যকর সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালে বিধিমালা সংশোধনের পর এবারই প্রথম তাদের তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফর্মেও লিঙ্গ হিসেবে নারী ও পুরুষের পাশাপাশি হিজরা রাখা হয়েছে। ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় নাই। এজন্য হিজড়ারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী পুরুষ বা নারী যেকোনো একটি অপশন পছন্দ করে ভোটার হতে পারবে। ভোটার তালিকার পরবর্তী হালনাগাদে তাদের হিজড়া ভোটার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে তালিকাভুক্ত হবে।
হিজরাদের প্রতিনিধি সুমি খাতুন বলেন, ‘মেহেরপুর জেলায় আমাদের মোট সংখ্যা ২৯ জন। এরমধ্যে মেহেরপুর সদরে ১৯ জন ও গাংনীতে ১০ জন। আমরা সকলেই অনেক আগে থেকেই নারী ভোটার হিসাবে তালিকাভূক্ত। নতুন করে ভোটার হিসেবে আমাদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি।’
মেহেরপুর জেলা নির্বাচন অফিসার মো: ওয়ালিউল্লাহ মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেহেরপুরে হিজড়া ভোটাররা নারী ভোটার হিসেবে আগে থেকেই তালিকাভুক্ত ছিলেন। নতুন যারা ভোটার হবেন আমরা তাদেরকে হিজড়া ভোটার দেখাবো। অন্যরা আগের তালিকাতেই থাকবেন। এ বছর গাংনীতে নতুন দুজন ভোটার হয়েছেন। আমরা তাদেরকে হিজড়া ভোটার হিসাবে দেখিয়েছি। অন্যদের আমরা আগের তালিকাতেই রেখেছি।’