মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বেপরোয়া উঠেছে মাদক কারবারীরা। ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বানের পানির মত বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য আসছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। বিশেষ করে গাংনী উপজেলার খাঁসমহল, রংমহল, সহড়াতলা, কাজিপুর, তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্তগুলো মাদক পাচারের নিরাপদ ঘাটিতে পরিণত হয়েছে।
বিজিবি ও বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক কারবারীরা গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, মদসহ নানা ধরণের মাদক আনছেন।
তবে, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের কঠোর অভিযানের ফলে জেলাসহ গাংনী উপজেলার অধিকাংশ মাদকের স্পট বন্ধ হয়ে যাওয়ার সুযোগ এখন কাজে লাগাচ্ছে সীমান্তবর্তী দুই দেশের মাদক ব্যবসায়ীরা।
মাদকসেবীরা এখন মাদক সেবন করতে মোটরসাইকেল এবং সিএনজিসহ নানা প্রকার যানবাহনে ছুটছে মেহেরপুরের বিভিন্ন সীমান্তে।
এদিকে বিজিবি বলছে, প্রয়োজনীয় আলামত না থাকায় অধিকাংশ মাদক সেবনকারীদের আটক করতে পারছে না সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, মাদক সেবক ও কারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্স। একটি মাদক কারবারীকেও ছাড় দেওয়া হবেনা। কারণ, মাদক সকল অপরাধের মুল কেন্দ্রবিন্দু।তিনি বলেন, সাড়ে পাঁচ মাসে গাংনী থানা পুলিশ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪৬ কেজি গাঁজা, ১০৭১ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল, ৮০০ পিচ ইয়াবা, ২০ বোতল ভারতীয় টাইগার মদ, ১৪ বোতল বিদেশী মদ ও এদেশীয় চোলায় মদ উদ্ধার করেছে।এসময় মাদকের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ৯০ জনকে আটক করা হয়েছে। মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৫১ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের সাড়ে পাঁচ মাসের ডিবি পুলিশের অভিযানে সাড়ে ৫ মাসে প্রায় সাড়ে ৬ কেজি গাঁজা, ৫৭৯ বোতল ফেনসিডিল, ৪০ গ্রাম হেরোইন, ৩৬০ পিচ ইয়াবা, ৩ বোতল ভারতীয় মদসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য উদ্ধার করে।
এসব মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৪১ টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া মাদক কান্ডে ৫০ জন আসামীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের ফলে এখন আগের মতো যত্রতত্র আর মিলছে না মাদক। মাদকে সয়লাব ছিল যেসব স্পট সেখানে গিয়ে কাঙ্খিত মাদক না পেয়ে গাংনীসহ আশপাশের জেলার মাদকসেবীরা এখন মেহেরপুরের সীমান্তে এসে ভিড় জমাচ্ছে।
সীমান্ত রক্ষাবাহিনী বিজিবির দুর্বল নজরদারির সুযোগে এসব মাদক সেবনকারী মেহেরপুরসহ গাংনী উপজেলার সীমান্তে এসে মাদক সেবন করছে।
সূত্র জানায়, মাদকের সংকটের সুযোগে সীমান্তে দুই দেশের মাদক ব্যবসায়ীরা এখন রমরমা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজিবি এবং বিএসএফের টহলের ফাঁকে ফাঁকে এসব মাদক ব্যবসায়ী দুই দেশে আনাগোনা করছে এবং মাদক বেচাকেনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সীমান্তবর্তী বাড়িঘরগুলো এসব মাদক ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দিন-দুপুরে মাদক বহনের জন্য সীমান্তের গ্রামগুলোর শিশুদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহেরপুর সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় চিহ্নিত ‘স্পট’গুলোতে সন্ধ্যার পরই পাল্টাতে থাকে চিত্র। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় বাড়তে থাকে মাদকের বহর। সীমান্তের ওপাড় থেকে এপাড়ে মাদক চালানের অন্যতম ‘সহায়কের ভূমিকা’ পালন করে ‘লাইনম্যানরা। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন বাহনে গাংনীর সীমান্তে এসে মাদক সেবনকারীদের মাদক সেবন এখন চোখে পড়ার মতো।
বিজিবি সূত্র জানায়, মেহেরপুর জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকে মোটরসাইকেলযোগে বিভিন্ন বয়সের তরুণ ও যুবক মাদক সেবন করতে মেহেরপুর সীমান্তে আসে মাদক সেবন করতে।
বিজিবি এবং পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক যুবককে আটক হয়। এছাড়া মাদক কারবারি এবং সেবনকারীদের আটক করতে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে।