অনাবৃষ্টি আর অব্যাহত খরায় চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধান আবাদ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন মেহেরপুর জেলার চাষিরা। টানা তাপদাহে পুড়ছে ধানের লাগানো চারা। এমনকি মাঠে লাগনো আমন ধানের চারাও এখন হলুদ রং ধারণ করতে শুরু করেছে।
এদিকে কৃষকরা ফসলের জমি ভালো রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরায় পুড়েছে আমনের বীজতলা। আমন চাষের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এখনও অনাবাদী পড়ে আছে অনেক জমি।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের কৃষক জিয়ারুল ইসলাম বলেন, এখন বর্ষাকাল হলেও দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরতাপে ব্যাহত হচ্ছে ফসলের চাষ। আর আমন চাষে প্রতিটি সেচ বাবদ ২০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। কৃষকরা সেচ পাম্পের মালিকের সঙ্গে মৌসুম চুক্তি করেও সেচ দিচ্ছেন। এতে এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে এ বছর ছয় থেকে সাত হাজার টাকা অতিরিক্ত সেচ খরচ গুনতে হচ্ছে।
আমদহ গ্রামের কৃষক জামাত আলী বলেন, এ বছর আমার দুই বিঘা জমিতে ধানের চাষ আছে। বৃষ্টি না হওয়ায় একদিন পর পর সেচ দিতে হচ্ছে। একদিকে যেমন সার, বিষ ও ডিজেলের দাম বেড়েছে, তার ওপর অতিরিক্ত সেচ খরচ দিতে গিয়ে কৃষকরা এবার মাঠেই মারা যাবে।
উপজেলার নোনপাড়া গ্রামের কৃষক রাশিদুল ইসলাম বলেন, খরার কবলে পড়েছে জেলার প্রধান ফসল রোপা আমন। অন্যান্য বছর আমন ধান চাষের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। কোনো ধরণের সেচ দিতে হয় না। কিন্তু এ বছর বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির মুখ দেখা যায়নি। আমার আট বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ রয়েছে। এখন জমিতে একদিন পর পর সেচ দিতে হচ্ছে। অনাবৃষ্টির কারণে ধান ওঠা পর্যন্ত শুধু সেচ খরচ বাবাদ আমার ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। কৃষকের এখন বর্ষা মৌসুমেও চৈত্র ধান চাষের মতো খরচ হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গাংনী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের মতিয়ার জানান, প্রতি বছর আমি চার থেকে পাঁচ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করে থাকি। এ বছর অনাবৃষ্টি আর খরার কারণে ভালো চারা পাইনি। বীজতলাও রোদে শুকিয়ে গেছে।
একই উপজেলার বাওট গ্রামের আশরাফুজ্জামান কালু বলেন, বছরে সাত থেকে আট বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করি। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতে রোপন করা চারাগুলো মারা যাচ্ছে। আষাড় চলে গিয়ে আজ শ্রাবণ মাসের ৩ তারিখ। তবুও বৃষ্টির দেখা নেই।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় ২৬ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি। এখনও সময় আছে। চারা নিয়ে অনেকেই অপেক্ষায় আছেন। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে কৃষকরা ধান লাগাতে শুরু করবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মেহেরপুর জেলার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সামছুল আলম বলেন, রোপা আমন চাষ বৃষ্টি নির্ভর। কিন্তু এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। তার ওপর বেশ কিছুদিন ধরে খরায় পুড়ছে আমনের বীজতলা। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের সম্পূরক সেচের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।