মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড এলাকার দম্পতি আবু জাহিদ ও জাকিউল ইলমা জাকীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার ভাই মহিবুল ইসলাম ওহিদ।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহিবুল ইসলাম ওহিদ। এসময় তিনি বলেন,আমি আমার মেজ ভাই মোঃ আবু জাহিদ ও তার স্ত্রী মোছাঃ জাকিউল ইলমা জাকি কর্তৃক চরম নির্যাতন এর শিকার একজন অসহায় ব্যক্তি।
আমাদের বড় ভাই সাঈদ ১৯৯৪ সালে পরিবার থেকে পৃথক হওয়ার সময় মা,তিন ভাই,তিন বোন সকলের সম্পত্তি পজিশন উল্লেখ করে ভাগবন্টন করে দেন। আমাদের এই ভাগবন্টনটি রেজিস্ট্রি ছিলোনা,সবার উপস্থিতি ও আলাপ আলোচনা করে কাগজে লেখা ছিলো।
আমার বড় ভাই এবার আমার দুইজনের ই দুইটা মেয়ে সন্তান এবং জাহিদের দুইটা ছেলে সন্তান। উদ্দেশ্যপূর্ণদিত কারণে আমাদের ভাগবন্টনটি রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে না।
জাহিদ ও জাকি মায়ের ঘরে ঢুকে বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন কথা শোনাতো।যেমন ওহিদের দুটি মেয়ে,জমি জায়গার দরকার নেই,তারা পরের ঘরে চলে যাবে,আমার দুটি ছেলে তোমার বংশের বাতি জ্বালাবে,কবর দেবে ইত্যাদি নানান ভুলানো কথা শুনিয়ে মায়ের বসতঘরসহ জমিটি (প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের) কুটকৌশলে ১৯/০২/২০২১ রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে।
এখন জাহিদ গাংনীর জমির রাস্তার সামনের সব পজিশন জোর পূর্বক নিতে চাই, সেই কারনে আমার ১৯৯৪ সাল থেকে বসবাস করা এবং আমার অফিস ঘর থেকে কম্পিউটার, চেয়ার টেবিল ভাংচুর করে অন্য ঘরে পাঠিয়ে দেই এর পরে আমাদের গ্রামের একটি পুকুর জোর পূর্বক এক মাস্তানকে কমমূল্যে লীজ দিয়ে জবরদখল করে। এখন আমার বাগান ও অন্যান্য দামী সম্পদ গুলোর উপর নজর পড়েছে।
একদিন হঠাৎ আমার স্ত্রীকে আমার রান্নাঘরে গিয়ে জাকি ও জাহিদ রঙ নিয়ে এলোপাতাড়ি মেরেছে ভয় সৃষ্টি করে রাখার জন্য। তখন আমি গাংনী থানাতে মামলা করলে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলীর নিকট মায়ের বিশেষ অনুরোধে, রাত্রিতে মেয়র বাসা থেকে ডেকে নিয়ে জমি জায়গার হিসাব বুঝিয়ে দিবেন বলে মামলা উঠানোর অনুরোধ করেন।
ঐদিন রাত্রিতে গাংনী থানা হাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে,আর মেয়র মহোদয়ের কথা রাখেনি। এ বিষয়ে জাকি ও জাহিদের প্রতি মেয়র চরম ক্ষিপ্ত। জমি বন্টন রেজিষ্ট্রি না করার কারনে সে আমার একের পর এক দামি সম্পদ গুলো জবরদখল করার জন্য প্রকাশ্যে আমাকে ও আমার পরিবারকে খুন করার হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে থানায় জিডি (নং-১০৮৬,তারিখ ২২/০৫/২০২৩) করলে থানা কঠোর সতর্কবার্তা দেওয়ার পরেও সর্বশেষ গত ২১ শে আগষ্ট ২০২৩ তারিখ সকাল ৭.৩০ ঘটিকার সময় আমার ছোট মেয়েকে স্কুলে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য বাসা থেকে মোটর সাইকেল বাহির করে গেটের সামনে মেইনরোডে পৌঁছালে,পিছন থেকে জাহিদ ও জাকি প্রকাশ্যে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড ও কাঠের হুক দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে।
গত ২৩/০৮/২০২৩ ইং তারিখে গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করি, যার নং-২৯৫/২৩। থানা অফিসার মামলা তদন্ত করে স্বাক্ষীদের জবানবন্দীসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে চূড়ান্ত চার্জশীট বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেছেন। মামলাটির অভিযুক্ত ধারা ৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৫৪/৫০৬/৪২৭/১১৪ পেনালকোড।
মামলার চার্জশীট আদালতে জমা হওয়ার পরে আসামীরা ক্ষীপ্ত হয়ে আমার মাকে দিয়ে চরম মিথ্যা একটি কাউন্টার মামলা দিয়েছে, যার নম্বর সিআর-৫৬৮/২৩ তারিখঃ ১৩/০৯/২০২৩। মাকে ভুল বুঝিয়ে সব মীমাংসা হয়ে যাবে এমন কথা বলে মামলা করিয়েছে। এদিকে সিজার-৫৬৮/২৩ মামলার তদন্ত আদালত গাংনী থানাকে দিয়েছে।
আসামীরা এতই ক্ষীপ্ত যে, আমাদের মিথ্যা মামলায় জেল হাজতে নেওয়ার জন্য সে রাজনৈতিক নেতা,থানা,মাস্তান সবকিছুকে তার হাতে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমি আসামেদের হামলা মিথ্যা মামলার ভয়ে অনেকদিন নিজ বাড়িতে অবস্থান করি না। আসমিরা যখন আমাকে বাড়িতে পায় না তখন সিদ্ধান্ত নেয় আমার স্ত্রীকে মিথ্যা মামলায় থানা হাজতে নিবে। আমার স্ত্রী আমি আমঝুপি উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন। বিভিন্ন তথ্য থেকে আমি জানতে পারার পর ১২/১০/২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে আমি তাকে স্কুল থেকে বাসায় না যেতে বললে সে তার বাবার বাড়িতে থেকে যায়। পরদিন মেয়েদের ছোট মামাকে নিয়ে আসার জন্য পাঠালে, তাকে সহ মেয়েদের আটকিয়ে রাখে।
পরবর্তীতে গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জকে ফোনে বিষয়টি জানালে,তিনি ডিউটি অফিসার এর সাহায্যে আসামীদের ডেকে ধমকিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পরেও বাড়ীতে এসে আসামীরা,আমার বন্ধু ও চাচাতো ভাইকে দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে মেয়েদের আসতে দেয়। এখন আমার বাড়ীতে ঢুকলেই আসামীরা মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে।
এরপর সিআর-৫৬৮/২৩ মিথ্যা মামলার তদন্তে গাংনী থানার এস আই হাফিজুর রহমান আমাকে ফোনে হুমকির মধ্যে রেখেছে। এই মামলার পরবর্তী আদালতে রিপোর্ট জমার তারিখ ধার্য করেছে জানুয়ারী ২৪ এর শেষ সপ্তাহে। এস আই হাফিজ আমার নিজ গ্রামে (শানঘাট) আমার দোকান ভাড়াটিয়া,পুকুর লীজ গ্রহনকারী ও জমি লীজ দিয়েছি তাদের দিয়ে ২৬/১০/ ২৩ খ্রিঃ তারিখ সকালে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে এবং সে কাগজ এস আই হাফিজের নিকট জমা আছে।আমি সন্দেহ করছি এবং আশংকায় আছি, আসামী জাহিদ ও জাকি আমাদেরকে হয়তো নতুন কোন মিথ্যা মামলায় জড়াতে পারে।
এদিকে আসামী জাকিউল ইলমা জাকি সরকারী চাকুরী করে প্রকাশ্যে অন্যায়ভাবে আমাকে মেইন রাস্তায় মারধর,বিভিন্ন সময়ে অফিস আসবাবপত্র, কম্পিউটার, টেবিল, ঘরের দরজা, মটর সাইকেল ভাংচুর করেছে। থানা ও আদালতে ফৌজদারী দন্ডবিধি ধারা অনুযায়ী চার্জশীট জমা হলে ২৭/০৯/২৩ খ্রিঃ তারিখে আমি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার,মেহেরপুর ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার,গাংনী মহোদয়কে অভিযুক্ত আসামীদের মমলার চার্জশীট, জিডি কপি,মেডিকেল রিপোর্ট, ছবি ও বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে আবেদন করলেও অভিযুক্ত শিক্ষককে এখন পর্যন্ত সাসপেন্ড কিংবা কোন রকম আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেন নাই।
এবিষয়ে মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন,বিষয়টির লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। মেহেরপুর সদর প্রাথমিক অফিসারকে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া পরে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মহিবুল ইসলাম ওহিদ সহযোগিতা চেয়ে আরো বলেন,পিতার রেখে যাওয়া জমির ওয়ারিশ হিসাবে ন্যায্য হিস্যা বন্টন রেজিষ্ট্রি চাই। বিগত তিন বছর ধরে আমার ও আমার স্ত্রীর নামে তিনটি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী,অন্যায়ভাবে আমার হাতভাঙ্গাসহ জখম করেছে,আমার স্ত্রীকে মেরেছে,আমার অফিস আসবাপত্র, কম্পিউটার, মটরসাইকেল ঘরের দরজা ভেঙ্গেছে,আমার পরিবার সহ বাড়ীছাড়া করিয়েছে এর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবী করছি। আমার ও আমার পরিবারের এবং সম্পদের নিরাপত্তা চাচ্ছি। আগামীতে আর কোন মিথ্যা মামলা ও হয়রানী করবে না।