মেহেরপুর কোর্ট মসজিদ মার্কেট উচ্ছেদ করাকে কেন্দ্রে করে হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সংগঠণ ও জেলা প্রশাসন এখন মুখোমুখি অবস্থানে। দোকান মালিকগণ ও ব্যবসায়ী সংগঠণের সভাপতি আব্দুল হান্নানের দাবী কোনো রকম নোটিশ প্রদান ছাড়াই জেলা প্রশাসক খামখেয়ালিপনা করে দোকানপাট উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছেন।
তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সকল ধরনের আইনী প্রক্রিয়া শেষ করেই এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা মডেল মসজিদের সামনের শ্রীবৃদ্ধির জন্য ২৬ টি দোকানের এই মার্কেটটি উচ্ছেদ করা হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমশিনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদের নেতৃত্বে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯ টার দিকে মেহেরপুর কোর্ট মসজিদ মার্কেট উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। উচ্ছেদকৃত মার্কেটের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের মালিক আকছেদ আলী, জানান, জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে জেলা প্রশাসকের কোনো সিল মারা বা স্বাক্ষর ছিলনা। যে কারণে আমরাও তেমন গুরত্ব দেইনি।
পলাশ এন্টার প্রাইজের মালিক মিনারুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসক আমাদের উচ্ছেদ করে দিয়ে আমাদের পরিবারের লোকজনের পেটে লাথি মারলেন। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় রইলো না।
আসিফ পেপার্স এর মালিক মাহমুদুর রহমান আসিফ বলেন, আমরা এখন যাবো কোথায় ? জেলা প্রশাসক আমাদের বিকল্প কোনো কিছু না করেই উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। আমরা এজন্য আইনী প্রক্রিয়ায় যাবো।
তারা আরও বলেন, বাজার কমিটির সাথে জেলা প্রশাসকের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। সেখানে মসজিদের প্রবেশদারের তিনটি দোকান ভেঙ্গে ফেলার জন্য একটি পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনার কোনো সুরাহা না হতেই আজ সকালে হঠাৎ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।
এই মার্কেটটিতে ২৬ টি দোকান রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রথমেই ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন। এক পর্যায়ে ওই মার্কেটের কসমেটিকস ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম এক্সকাভেটর চালকের চাবি কেড়ে নেন।ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানগুলো রক্ষার্থে ওই মার্কেটের সামনে জড়ো হয় বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চার্জ করেন। দোকান উচ্ছেদ শুরুর সাথে সাথেই এর প্রতিবাদে কোর্টরোডের ব্যবসায়ীরা সকাল সাড়ে ৯ টা থেকেই তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন।
মেহেরপুর কোর্ট রোড এলাকার মোড়ে মোড়ে কয়েকটি স্থানে টায়ার জালিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন ব্যবসায়ীরা। এঘটনায় দুইজন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, সেলিম হোসেন ও আজহারুল ইসলাম।
কোনো রকম অপ্রিতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জামিরুল ইসলাম।
মার্কেট ভাঙ্গার প্রতিবাদে ও জেলা প্রশাসকের বদলীর দাবীতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি কেনো, ডিসির কাছে জবাব চাই, শ্লোগান দিতে দিতে ডিসি অফিসের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এঘটনায় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপাতি আব্দুল হান্নান, সহসভাপতি আবু আক্তার, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ইকবাল শিমন, সদস্য রাশেদ, আজহারুল ইসলামসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী।
মার্কেট উচ্ছেদের প্রতিবাদে আজ বিকাল ৫ টার সময় মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বলে জানান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেছেন, কোনো রকম নোটিশ ছাড়াই আমাদের ব্যবসায়ীদের দোকান পাট উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এছাড়া মার্কেটটি বাঁচাতে জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনো সে মামলায় আদালত বিচারাধীন। আদালতের রায়ের আগেই জেলা প্রশাসনের এ ধরনের খামখেয়ালীপনায় ২৬ জন ব্যবসায়ী আজ পথে বসতে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ভ্যাট ট্যাক্্র, করের টাকায় জেলা প্রশাসকসহ সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন হয়। অথচ, সেই ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মেরেছে বর্তমান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন এর আগের জেলা প্রশাসকগণ আমাদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা সিকিউরিটি নিয়ে এই মার্কেটের দোকান বরাদ্দ দেন। সাম্প্রতিক সময়ে এডিসি সাহেব আমাদের ব্যাংক একাউন্ট করিয়েছেন। সেই এ্যকাউন্টেসের মাধ্যমেই দোকান ভাড়ার টাকা প্রদান করা হয়।
ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ফজলুল হক বলেন, কারোর কু পরামর্শে অনৈতিকভাবে এই উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লিংকন বিশ্বাস জানান, জেলা প্রশাসন সকল ধরনের আইনী জটিলতা শেষ করেই এই মার্কেটটি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছেন।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, মসজিদের শ্রীবৃদ্ধির কারণে সামনের মার্কেট উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারী জমিতে এতদিন কোনো মার্কেট থাকতে পারেনা। অনেকবার তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। রমজান মাসের আগেই সকল ধরনের আইনী প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। কিন্তু মানবিক কারণে তাদের আমরা আড়াই তিন মাস সময় দিয়েছিলাম। আগের জেলা প্রশাসক কেনো দোকার বরাদ্দ দিয়েছিলেন এব্যাপারে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা বিকল্প ব্যবস্থা করার দাবী জানিয়েছিলেন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের এধরনের কোনো বরাদ্দের সুযোগ নেই।