মেহেরপুরে মাচা পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের চিচিংগা চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। চিচিংগা চাষে উপযুক্ত মাটি, এবং অনুকুল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি হিসেবে চাহিদা থাকায় নিজ জেলার চাহিদা পুরুন করেও রপ্তানি করা হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। দাম ভাল পেয়ে খুশি চাষিরা। বৃষ্টিপাত বেশি হলে আরও বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব বলছেন কৃষকরা, সবজিখ্যাত মেহেরপুর জেলায় আরও নতুন নতুন সবজি আবাদে চাষিদের উদ্বুদ্ধকরনসহ নানা ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে বলছেন কৃষি বিভাগ।
মেহেরপুরের বিভিন্ন মাঠে প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে মাচা পদ্ধতি ব্যবহার করে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু সবজি চিচিংগা আবাদ করা হচ্ছে। স্বল্প সময় ও অল্প খরচের এ সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন অনেক কৃষক। এখন চিচিংগা তোলার ভরা মৌসুম। জেলার বিভিন্ন বাজারে এখন ভাল দামে বিক্রি হচ্ছে চিচিংগা। জেলার মানুষের তরকারি চাহিদা পুরুন করেও বিভিন্ন এলাকার পাইকার ব্যবসায়ীরা চিচিংগা ট্রাক ভর্তি করে পাঠাচ্ছেন ঢাকা, বরিশাল, সিলেট, চট্রোগ্রামসহ দেশেল বড় বড় শহরে। প্রতিকেজি চিচিংগা পাাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে এসবজির দাম ৩০ টাকা কেজি।
মেহেরপুর সদর উপজেলার, রামদাসপুর গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন এক বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল বঙ্গরেখা জাতের চিচিংগা আবাদ করেছেন। জমি প্রস্তত, বীজ, সার ,কীটনাশক ও মাচা তৈরীতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এখন এক বিঘা জমি থেকে প্রতি সপ্তায় দুদিন করে চিচিংগা পাচ্ছেন।
চাষি জামাল হোসেন জানান, প্রতি সপ্তায় অন্তত ৫ থেকে ৬মন করে চিচিংগা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিমণ চিচিংগা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় এক লক্ষ টাকার চিচিংগা বিক্রি করেছেন। তিন মাসে তিনি আরও লক্ষাধিক টাকার চিচিংগা বিক্রির আশা করছেন।
ষোলমারি গ্রামের চাষি নাহিদ আলম বলেন গেল বছর আামি এক বিঘা জমিতে চিচিংগা আবাদ করেছিলাম। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়েছিল। এবারও এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। একাধঅরে তিন মাস চিচিংগা বিক্রি করতে পারবো। এবছরে সব সবজির দাম ভাল হওয়ায় চিচিংগারও চাহিদা আছে বাজারে। জমি থেকে প্রতি সপ্তায় দুদিন করে পাইকাররা চিচিংগা নিয়ে যায়। আবার স্থানীয় বাজারেও আমরা বিক্রি করি। অন্যান্য সবজির চেয়ে চিচিংগার চাহিদা এবছর অনেক বেশি,দামও ভাল।
গাংনী.কাথুলী গ্রামের চাষি আব্দুল কুদ্দুস জানান, যতদিন চাহিদা থাকে ততদিন আমরা সবজি হিসেবে চিচিংগা বিক্রি করি। শেষের দিকে চাহিদা কমে গেলে বীজের জন্য চিচিংগা রেখে দিই। বীজ বিক্রি করেও ভাল টাকা লাভ করি প্রতি বছর।
ষোলমারি গ্রামের পাইকার ব্যবসায়ী মিশকাত,মিন্টু ও রামদাসপুরের মুন্তাজ আলী জানান, আমাদের অঞ্চলে উৎপাদিত সবজির চাহিদা বাইরের জেলায় অনেক ভাল। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি যে চিচিংগা আবাদ হয়, সে চিচিংগা দেখতে অনেক ভাল। খেতেও সুস্বাদু। আমরা প্রতিনিয়ত অন্যান্য সবজির সাথে ট্রাকভর্তি করে ঢাকা,বরিশাল, সিলেট ও চট্রোগ্রামে বিক্রি করি। এতে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন ,তাদের পাশাপাশি আমরা(ব্যবসায়ীরাও ) লাভবান হচ্ছি।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, মেহেরপুর জেলার মাটি ও আবহাওয়া সব আবাদেরই উপযোগী। কৃষরা এ মাটিতে যা ফলানোর চেষ্টা করেন তাই ফলে। কয়েক বছর যাবত জেলায় মাচা পদ্ধতি অবলম্বন করে চিচিংগা আবাদ করেছেন। এ আবাদে আজও কেউ লোকসানে পড়েনি। সকলেই লাভবান হচ্ছেন। আমরা নতুন নতুন আবাদে কৃষদদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। সেই সাথে চিচিংগাসহ বিভিন্ন সবজি আবাদে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগীতা অব্যাহত রেখেছি।