সিরাজুদ্দোজা পাভেল
মেহেরপুর সদর উপজেলার ময়ামারি গ্রামে পুকুর সংস্কারের নামে চলছে দেদারছে মাটি বিক্রির কর্মযজ্ঞ। বহনকৃত মাটি রাস্তায় পড়ে পাকা রাস্তাটি কাঁচা রাস্তায় পরিণত হবার উপক্রম দেখা গেছে। তেমনি দিনভর যন্ত্রদানব ট্রাক্টর চলাচলের কারণে ধুলো-বালিতে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। গ্রামটি যেন ধুলোর নগরীতে পরিণত হয়েছে।
প্রশাসনের নজর এড়িয়ে মাটি ও বালুমহাল ব্যবস্থাপনা আইনকে উপেক্ষা করে এলাকায় নির্বিঘ্নে পুরাতন পুকুর সংষ্কারের নামে অবাধে মাটি বিক্রি হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়।এ আইন অমান্য করলে জরিমানা অথবা জেল এমনকি উভয়দণ্ডেরও বিধান রয়েছে।
স্থানীয় ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তার প্রায় দশ বিঘা জমির একটি পুকুর সংস্কারের নামে একই এলাকার এমএম ইট ভাটায় মাটি বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাটিবাহী বেপরোয়া ট্রাক্টর চলাচলের কারণে চরম ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন সহ পথচারীরা। রাস্তাটি চেনার উপায় নেই এটি পাকা না কাঁচা। এলাকায় যেন পুকুর সংস্কারের ধুম পড়েছে আর অধিকাংশ পুকুর সংস্কারের মাটি যাচ্ছে এমএম ভাটাসহ বিভিন্ন ভাটায়।
এলাকাবাসী ও পথচারীদের অভিযোগ, ভাটাটির কারণে রাস্তায় চলাচল একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গ্রামের ভিতর দিয়ে সারাদিন ট্রাক্টও চলাচল করে। যেমন ট্রাক্টরের শব্দ তেমনি ধুলোবালি উড়ে। রাস্তার পাশের ঘরবাড়ি গাছপালায় ধুলোর স্তুপ পড়ে গেছে। মাটি বহনের কারণে এলাকার হেরিং রাস্তার ইটগুলো ভেঙ্গে ধুলোই পরিণত হয়েছে। দেখার কেউ নেই।
তাছাড়া প্রথমদিকে স্বল্প পরিসরে ভাটাটি চালু করলেও দিন দিন ভাটা প্রসারিত করার কারণে কমতে শুরু করেছে এলাকার আবাদী জমি। কিছুদিন আগেও ভাটার আশেপাশের সমস্ত জমি এলাকার মানুষ আবাদ করতো কিন্তু এখন সবই ভাটার দখলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, এই ভাটার কারণে দিন দিন এলাকার অনেক আবাদী জমি বিসর্জন দিতে হয়েছে এলাকার কৃষকদের। আমিও এখানে একজনের দেড় বিঘা জমি লীজ নিয়ে আবাদ করতাম কিন্তু এবছর জমিটি হারাতে হলো শুধুমাত্র ভাটার কারণে।
জমি জোর করে অথবা প্রভাব খাটিয়ে নেয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় মেম্বার প্রভাব তো আছেই। তবে কৌশল খাটিয়ে ভাটার আশেপাশের সমস্ত জমি এখন তার দখলে। জমি দিতে না চাইলে তারা কৌশল বা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পাশের জমি নিয়ে নেয়। তারপর চারিদিকে মাটির পাহাড় তৈরী করে। শুরু হয় জমির উপর অত্যাচার ফলে বাধ্য হয়ে জমি দিয়ে দিতে হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মিয়ারুল ইসলাম এই ভাটার মালিক সাথে তার পার্টনারও আছে। প্রথমদিকে স্বল্প পরিসরে ভাটা চালু করলেও পার্টনারের সহযোগীতায় দিনদিন বাড়ছে ভাটার পরিধি যার কারণে আশেপাশের আবাদি জমি ব্যবহৃত হচ্ছে ভাটার কাজে। ইচ্ছা না থাকলেও বাধ্য হয়ে দিয়ে দিতে হচ্ছে জমি।
এবিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য মিয়ারুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুকুরের মাটি সরাসরি আমি কিনছি না। পার্শবর্তী কোলা গ্রামের মিজা নামের এক ব্যক্তি মাটি কিনে বিক্রি করছে। আমি মিজার কাছ থেকে কিছু মাটি কিনে নিয়েছি।
মাটি বিক্রেতা মিজার সাথে যোগাযোগ করলে মিজা জানান, এসব মাটি বিক্রির তো অনুমতি কাউকে দেয় না। এখানকার মাটি বিক্রির কোন অনুমতি নেই বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, বিষয়টি জানা ছিলনা। যেহেতু এটি জনগুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা । এ ব্যাপারে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।