এম এফ রুপক:
প্রায় ২ হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর দেশের ছোট্ট জেলা মেহেরপুর। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এই জেলার সীমান্তবর্তী মুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। তাই এই জেলার ইতিহাস গৌরবোজ্জ্বল।
মেহেরপুর নামকরণ প্রসঙ্গে এ পর্যন্ত দুটি অনুমানভিত্তিক তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথমটি হলো- ইসলাম প্রচারক দরবেশ মেহের আলির নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ষোড়শ শতকে কিংবা এর কিছু সময় পর ‘মেহেরপুর’ রাখা হয়। অন্যটি হলো- বিখ্যাত বচনকার মিহির ও তার পুত্রবধূ খনা এই অঞ্চলে থাকতেন। মিহিরের নাম থেকে মিহিরপুর ও পরবর্তী সময়ে তা মেহেরপুর হয় বলে অনেকের ধারণা। ১৯৮৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলার মর্যাদা পায় মেহেরপুর।
এখানকার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স, ভবানন্দপুর মন্দির, আমদহ গ্রামের স্থাপত্য নিদর্শন, বলরাম হাঁড়ি মন্দির, আমঝুপি নীলকুঠি, ভাটপাড়া নীলকুঠি, স্বামী নিগমানন্দ আশ্রম, বল্লভপুর চার্চ, শেখ ফরিদের দরগাহ, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, মেহেরপুর পৌর কবরস্থান, মেহেরপুর শহীদ স্মৃতিসৌধ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর ছোট্ট এই শহরের ঔজ্জ¦ল্য করোনায় ধূসর হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, মেহেরপুরে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা ষাটের কাছাকাছি। সংস্কৃতি কর্মীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। প্রায় সবাই বেকার হয়ে গেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ১৭৫ জনের তালিকা পাঠানো হলেও তাদের মধ্য থেকে ১০০ জনকে সহায়তা দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনার ধাক্কায় মেহেরপুরে সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখনো স্থবির। মুজিববর্ষের দুয়েকটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও মূলত আগের পরিস্থিতিই রয়েছে। এতে অধিকাংশ শিল্পীরই জীবন কাটছে কষ্টে। নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি কৃষি করছেন।
জানতে চাইলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও অরণী থিয়েটারের সভাপতি নিশান সাবের বলেন, করোনার কারণে পেশাজীবী শিল্পীদের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা করোনা সহায়তা পেলেও তা একেবারেই অপ্রতুল। সরকরের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি, যেভাবে মুক্তিযোদ্ধা কিংবা বিধবা ভাতা দেয়া হয়, সেভাবে দুস্থ অসহায় শিল্পীদের পাশে দাঁড়াক। এই সংগঠক আরো বলেন, শিল্পীরা যে সাহসিকতা নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অবদান রাখছেন তার কোনো তুলনা নেই। কিন্তু সেভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না। সরকার এদিকে নজর দিক এটাই আমাদের দাবি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম শাহিন বলেন, করোনায় কাজ হারিয়েছে অনেকেই। যাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের করোনা সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য নানাভাবে সহায়তা করেছেন। তবে তা অপ্রতুল।
এম সাইদুর সংগীত একাডেমির পরিচালক শিল্পী এম সাইদুরের কণ্ঠে শোনা গেল হতাশার সুর। তিনি বলেন, গত ৯ মাস ধরেই বেকার বসে আছি। জীবন বাঁচাতে সঞ্চয় ভেঙে চলছি। কোথাও সংগীতের কোনো আয়োজন নেই, স্কুলগুলোতে কোনো কার্যক্রম নেই। আছে শুধু বুক ভরা কষ্ট। এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আরো বলেন, সংগীতের শিক্ষকতা করে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতাম। এখন কোনো রকম টিকে আছি। এই দুঃসময়ে সরকারকে আমাদের পাশে চাই।
মেপ্র/এমএফআর