পলিথিনের প্যাকেটে গুটি চীপস্। সাথে ৫০০ টাকার নোট। বোঝারই উপায় নেই এটি আসল, নাকি নকল। শুধু টাকার গায়ে লেখা আছে খেলনা টাকার নমুনা। কোমলমতি শিশুদের কাছে এটি খেলনা হলেও প্রতারকদের কাছে প্রতারনার নয়া হাতিয়ার। এ টাকা নিয়ে প্রতারিত হয়েছেন অনেকে। মেহেরপুরের সকল মুদি দোকানে এসব চীপস্ বিক্রি হচ্ছে। যদিও এ চীপস্ এর প্যাকেটে নেই উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের নাম তবুও কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের।
তবে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, মুদি ও চায়ের দোকানে ঝোলানো রয়েছে নাম না জানা কোম্পানীর এসব চীপস্ । সাথে প্লেইন পেপারে মুদ্রিত চকচকে ৫০০ টাকার নোট। এক প্যাকেটের দাম মাত্র পাঁচ টাকা। শিশুরা এ টাকা পেয়ে বেজায় খুশি। সেই সাথে প্রতারকরাও প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে। দেখতে হুবুহু আসল টাকার মত হওয়ায় তারা সহজ সরল মানুষকে ওই টাকা দিয়ে ঠকানোর চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে প্রতারিত হয়েছেন অনেকে। এদের মধ্যে গাংনীর কুঞ্জনগর গ্রামের কৃষক আশরাফূল ইসলাম ও নতুন পাড়ার মনিরুল অন্যতম।
আশরাফূল ইসলাম জানান, তিনি গত সোমবার বামুন্দি হাটে পাট বিক্রি করে দশ হাজার টাকা পান। ওই টাকার মধ্যে দুটি ৫০০ টাকার নমুনা নোট পাওয়া যায়। নতুন ও চকচকে এ নোট দিয়ে দোকানে মালামাল কিনতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন টাকার নোটটি আসল নয়। সাথে সাথে টাকা দুটি পুড়িয়ে ফেলেন তিনি। এদিকে সবজি বিক্রেতা মনিরুল জানান,তিনি খলিশাকুন্ডি হাটে পেঁপেঁ বিক্রি করেন। সেখান থেকে একটি ৫০০ টাকার নোট দেয়া হয়,পরে তিনি বুঝতে পারেন এটি আসল টাকা নয়। আড়ৎদারকে বলা হলে তিনিও প্রতারণার স্বীকার বলে জানান। হাড়াভাঙ্গা গ্রামের একটি ভ্যারাইটিজ স্টোরে দোকানে কেনাকাটা শেষে মিলন নামের একজন ৫০০ টাকার নোট দেয় দোকানদার রাজু’কে। টাকা নেওয়ার সময় না দেখলেও পরে তিনি দেখেন টাকাটা নকল। পরে মিলনকে বিষয়টি তিনি জানিয়ে ফেরত দেন।
মেহেরপুর জেলার প্রত্যন্তাঞ্চল কাজিপুর ও হাড়াভাঙাগা বাজারের রাজিয়া স্টোর, স্বপন স্টোর, শামীর রেজার পাতা স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে এসব চিপস। স্টোরের মালিকরা জানেন না শিশুদের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর এসকল চিপস সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানের নাম। রাজিয়া স্টোরের মালিক কাবের উদ্দিন বলেন, আমরা কোথাও গিয়ে কিনে আনি না,একজন লোক আমাদের দোকানে দিয়ে যায়। তবে কোনদিন তার নাম জিজ্ঞেস করিনি।নামহীন ভুঁইফোড় কোম্পানির এই গুটি চিপস কতটুক স্বাস্থ্যকর এবং আটা ও চিনি দিয়ে তৈলে ভাজা গুটি চিপস কতটুক মানসম্মত পরিবেশে তৈরী হচ্ছে এ নিয়েও প্রশ্ন নানা মহলে।
মুদি ব্যবসায়ী কুঞ্জনগরের আক্কাছ আলী জানান, স্থানীয় হকাররা মুদি দোকানিদের এগুলো সরবরাহ করেন। এ টাকা থাকার কারনে ছোট ছোট কোমলমতি শিশুরা বেশ আকৃষ্ট হচ্ছে গুটি চিপস খেতে। বেচা বিক্রি বেশি। এ কোন কোম্পানীর তৈরী তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন নি। আক্কাছ আলীর মতো কোন ব্যবসায়ি নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের নাম। তবে প্রতারণার সংবাদে বিষ্মিত তারা।
মেহেরপুর জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা রিয়াজ মাহমুদ বলেন, ইতিমধ্যে কয়েকটি দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। এসব খাবার যাতে বাজারজাত করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে। তবে নমুনা টাকার বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া দরকার । নতুবা অনেকেই প্রতারিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর তাজিমুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বেশ কয়েকদিন সদর উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিলেন, পরে খোঁজ নেয়া হয়নি। তবে বিষয়টি শুনলাম, মাঠপর্যায়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন নাসির উদ্দীন বলেন, এসব ভাজা-পোড়া খাবার শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর। এগুলো খাওয়া থেকে শিশুদের বিরত থাকতে হবে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী কাজ করছে। সঠিক সময়ে প্রকৃত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।