মেহেরপুর সদরের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দিন দিন অমনোযোগী হয়ে পড়ছে লেখাপড়া থেকে। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছে ইন্টারনেট ফাইটিং গেম ফ্রি ফায়ার ও পাবজি নামক গেইমে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ যেন এক নেশায় আসক্তর মত জড়িয়ে গেছে।
সম্প্রতি ব্লু হোয়েল গেমসের আতংক কেটে যাওয়ার কিছুদিন পরেই নতুন জালে আটকে যাচ্ছে নবাগত উড়তি বয়সী শিক্ষার্থীরা ও পুরো যুব সমাজ। যে সময় তাদের ব্যস্ত থাকার কথা নিয়মিত পড়ালেখা সহ শিক্ষা পাঠ গ্রহন নিয়ে ও খেলার মাঠে ক্রীড়া চর্চার মধ্যে, সেখানে তারা ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে জড়িয়ে পড়েছে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি নামক গেমের নেশায়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর গ্রামের শফিকুল জানান আমাদের সময় আমরা অবসর সময়টি বিভিন্ন খেলা ধুলার মধ্য দিয়ে পার করতাম, কিন্তু এখনকার যুগে তরুণ প্রজন্মের সন্তানদের দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রুপ গেম মহামারি আকার ধারন করেছে।
শিক্ষার্থীরা অনেকে পড়ার টেবিল ছেড়ে খেলছে মোবাইল গেমস, কখনো ইন্টারনেটের খারাপ সাইটে বিভিন্ন ছবি দেখছে। ফলে তারা নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছে। লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। এতে একদিকে তাদের ভবিষ্যৎ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। তাই কিশোর-কিশোরীদের মা-বাবাসহ সমাজের সবারই খেয়াল রাখতে হবে, যেন তারা মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার না করে এবং প্রতিটি সন্তানকে একটু যত্ন সহকারে খেয়াল রাখার দায়িত্ব বা কর্তব্য বলে মনে করেন তিনি।
ফ্রি ফায়ার নামক গেমকে মাদকদ্রব্যর নেশার চেয়ে ভয়ঙ্কর বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় কয়েকজন প্রবীন সমাজ সেবকেরা। নাম বলতে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, ইয়ং জেনারেশন এখন ফ্রি ফায়ারের দিকে আসক্ত। যেটা কিনা একটা অনলাইন গেম সেখানে গ্রুপিং এর মাধ্যমে জুয়ার আসর তৈরি হচ্ছে। ফ্রী ফায়ার গেম ব্যবহার কারি শুভন, শাকিব, সমিক, সাওনের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব যেখানে থমথমে আছে সেখানে আমাদের মোতন ছাত্ররা কি করবে, সারা দিন তো আর ঘরে বসে দিন কাটাতে পারি না।
স্কুল বন্ধ, কোচিং বন্ধ, একা একা বাসাতে থাকতে থাকতে সময় যেনো আর যাই না তাই এই অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ারে সবার সাথে যোগাযোগ করতে যেমন পারছি সেই সাথে বিনোদন ও নিতে পারছি। তারা আরও বলে এই গেম থেকে যখন বিনোদন নেওয়ার জন্য খেলতাম তখন কোনো খরচ ছিলো না।
আসতে আসতে যখন আমার এটার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি তখন প্রতিটা ইভেন্টে ৪০০, ৫০০ টাকা খরচ না করলে যেনো হয়ই না। গেমটি তে প্রথমে কোনো খরচ লাগে না যখন গেমটিতে পুরো পুরি ভাবে মনোযোগ দিয় তখন দেখি গেমের ভিতরে এমন কিছু জিনিজ আছে যে গুলো না কিনলে নয়। যেমন, অলকের দাম ৪০০ টাকা, একটা প্লিয়ারে জারছি ৩০০ টাকা নতুন ইভেন্ট আসলেই ২০০০ এর নিচে যাইনা। সম্পূর্ণ ড্রেস কিনতে লাগে ১২০০ টাকা আর রেগুলার ইভেন্টের কথা তো বাদই থাকে।
মেহেরপুরের ক্রিয়া সংগঠক শাহিনুর রহমান রিটন জানান, মেহেরপুরে ক্রীড়া সংস্থাগুলো করোনাভাইরাস এর জন্য বন্ধ আছে তার সাথে স্কুল-কলেজ বন্ধ তাই সকল প্লেয়ার বা ছাত্ররা দীর্ঘ সময় বাড়িতে কাটাচ্ছে। তখন তারা এন্ড্রয়েড ফোন পেয়ে অনলাইন গেমস বা ফ্রী ফায়ার ও পাবজি নিয়ে পড়ে থাকে। এতে এতটাই আসক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে যেখান থেকে বাহির হওয়া খুবই দায়। মেহেরপুরের ক্রীড়া সংস্থাগুলোতে খেলোয়ার নিয়েও আশঙ্খায় আছেন তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আনোয়ার হোসেনের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে লেখাপড়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে বাসাতে শিক্ষার্থীরা থাকলেও লেখাপড়া তেমন কেউ করছে না। তারি ভিতরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম এর প্রতি আসক্ত অনেক শিক্ষার্থী। যেটা অনেক খারাপ প্রভাব পড়েছে লেখাপড়ার দিক দিয়ে।
আপনারা জানেন জে. এস. সি, এস.এস.সি, এইচ.এস.সি পরীক্ষা সাময়িক ভাবে বন্ধ আছে। তাই শিক্ষার্থীরা অমনোযোগী হয়ে পড়েছে লেখাপড়ার দিকে। তার ভিতরে আবার এই অনলাইন গেমস ফ্রী ফায়ার ও পাবজি যেটাতে আসক্ত সব বয়সের শিক্ষার্থীরা।