মেহেরপুরে আনেছা খাতুন নামের এক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আমিরুলের বিরুদ্ধে। একই সাথে প্রতিবন্ধীর মা ওমাতন খাতুনকেও মারধর করে প্রতিপক্ষরা। মা-মেয়ে দুজনেই মেহেরপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর নীলমনি পাড়ায় গত বুধবার এ ঘটনা ঘটে। ঐ দিন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মেহেরপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানান প্রতিবন্ধী আনেছা খাতুন।
আনেছা খাতুন জানান, গত বুধবার সকাল ১০ টার দিকে আমি আমার মা সহ বাড়িতে ছিলাম। এমন সময় আরমানের ছেলে আমিরুল, রুহুল, আরমানের মেয়ে জান্নাতন, আমিরুলের স্ত্রী সুমনা ও পিজ্জার আলীর মেয়ে অনুরা খাতুন অনধিকার বাড়িতে প্রবেশ করে লুটপাট করার চেষ্টা করে। আমি বাধাঁ দিতে গেলে আমার চলাচলে ব্যবহৃত লাটি দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারতে থাকে। আমার মা বাধাঁ দিতে গেলে তাকেও মারতে থাকে আমিরুল সহ তার গ্রুপের লোকজন। প্রায় ৩০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
পরে স্থানীয় কয়েকজন আমাদের উদ্ধার করে আমাকে ও আমার মাকে মেহেরপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসে। আজ তিনদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। ঘটনার দিন মেহেরপুর থানায় ৫ জনকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করি। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে ওসি মামলাটি রেকর্ড করেন, যার নং ০১। তিনি আরও জানান, থানার অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্যও আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার হাবিবুর রহমান জানান, গত বুধবার মা-মেয়ে দুজনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়। এখনো পর্যন্ত তাদের চিকিৎসা চলছে। আগের চেয়ে মোটামুটি সুস্থ। অল্পদিনের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে আশা করছি।
প্রতিবন্ধী আনেছার মা ওমাতন খাতুন জানান, এর আগেও আমাদের আমিরুলের লোকজন মারধর করে। আমরা অসহায় গরিব মানুষ তাই সাহস করে কাউকে কিছু বলতে পারিনি। আমাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। এলাকার প্রভাবশালী লোকদের সাথে আমিরুলের চলাফেরা। কিছু বলতে গেলে আমাদের গ্রামে থাকাই মুশকিল হয়ে যাবে। আমাদের মারধরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছি।
শ্যামপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আক্তার হোসেন জানান, প্রতিবন্ধীকে মারধরের ঘটনা আমি পরে শুনেছি। এ নিয়ে গ্রামে একটি শালিসও হয় কিন্তু আমাকে ডাকা হয়নি। সেই শালিসে কি হয়েছে আমার জানা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্যামপুর গ্রামের কয়েকজন জানান, অভিযুক্ত আমিরুল একসময় সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য ছিল। তিনি হত্যা, ডাকাতি, বোমাবাজিসহ বেশ কিছু মামলার আসামি । বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিল আমিরুল। বর্তমানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সাথে উঠাবসা করে এলাকায় নেতা হিসেবে পরিচিত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইকবাল জানান, মামলা রেকর্ড হওয়ার পর আসামি ধরার চেষ্টা চলছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের আটক করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান জানান, আমরা প্রতিবন্ধী আনেছা খাতুনের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মামলা নিয়েছি। একজন প্রতিবন্ধীকে শারীরিক নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।