জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া ৬৭৮ শিক্ষকের মধ্যে মেহেরপুর জেলার ৪ প্রতিষ্ঠানের ৬ শিক্ষকও রয়েছে। তাদেরকে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতেও বলেছে মন্ত্রণালয়।
মেহেরপুর জেলার ৬ শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন, সদর উপজেলার আমঝুপি এআরবি কলেজের যুক্তিবিদ্যার প্রভাষক ফাতেমা মহতাসিমা (ইনডেক্স নং ৩০৮২১৫৮), মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মুজিবুর রহমান ( ইন্ডেক্স নং ১০৫৭৮৪৯), গাংনী উপজেলার বামন্দী নিশিপুর স্কুল এন্ড কলেজের কম্পিউটার শিক্ষক আরেফিন ইসলাম (ইন্ডেক্স নং ২০১০৫৪০), একই প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি শিক্ষার শিক্ষক প্রভাষক মাহমুদ হাসান ও প্রদর্শক কম্পিউটার জাহাঙ্গীর আলম এবং সাহেবনগর বহুমুখি উচ্ছ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক কাফুর উদ্দীন।
সূত্র ডিআইএ এর পত্র নং ৩৭.১৯.০০০০.০৬১.১৬.০৪৩.২৩ তাং ০৮/০১/২০২৩ স্বারকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েক দিন আগে চিঠি দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) এই ব্যবস্থা নিতে বলেছে। সেই সাথে সাত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) যাচাই-বাছাইয়ে এসব জাল সনদধারী শিক্ষক চিহ্নিত করা হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে সনদ প্রদানকারী দপ্তর প্রধান বা প্রতিনিধির সমন্বয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সনদ যাচাই করে জাল সনদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তার আলোকে এখন এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ব্যবস্থার অন্যান্য নির্দেশনার মধ্যে আরও রয়েছে অবৈধভাবে গ্রহণ করা বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা, যাঁরা অবসরে গেছেন তাঁদের অবসর সুবিধা বাতিল, স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের আপত্তির টাকা প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের মাধ্যমে আদায় এবং জাল সনদধারীদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলার সাহেবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও বামন্দী নিশিপুর স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে এই খবরটি জেনেছি। কিন্তু সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো চিঠিপত্র আসেনি। সরকারিভাবে বা বোর্ড কর্তৃক কোনো চিঠি পত্র পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সাহেবনহর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক কাফুর উদ্দীন বলেন, আমি নট্রামস কর্তৃক কম্পিউটার সনদ নিয়েছি। আমাকে ২০১৩ সালে একবার ধরেছিল সেখানে আমার এই সনদ দেখিয়ে রেহায় পেয়েছি। এবার আমার এই সনদকে জাল বললে আমি আইনের আশ্রয় নেবো। কারন, এর সাথে আমার মান ইজ্জত জড়িয়ে আছে।
এআরবি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক ফাতেমা মহতাসিমা ২০১০ সালে এই কলেজে যোগদান করেন। বিষয়টি জানার পরে ২০১৮ সালে তাকে সাসপেন্ড করা হয়। তারপর থেকে সে কলেজে আসেননি। আগামি শনিবার (২৭ মে) ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছে। ওই দিন তার বিরুদ্ধে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মেহেরপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্বাছ উদ্দীন বলেন, আমাদের অফিসিয়ালভাবে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে, যাদের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকুরীর অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ও বেতন ভাতার সমুদয় টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা আসছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরও নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।