মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিজের অ্যাকাউন্টে ক্যাশ ইন করে দ্রুতই বাসায় ফেরেন মোহাম্মদপুরের এক বাসিন্দা। এর পর থেকে শুরু হয় একের পর এক নাটকীয়তা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট পরিচয়ে ফোনে পলাশ নামের ওই ব্যক্তিকে জানানো হয়, জাল টাকা লেনদেনের অভিযোগে তাঁর অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে। তবে ব্লক খুলতে চাইলে ৩০ সেকেন্ডে বলতে হবে মোবাইলে পাঠানো কোড নম্বর। একই সঙ্গে ওই নম্বরে পাঠাতে হবে ১০ হাজার টাকা।
এভাবে ধাপে ধাপে পলাশের কাছ থেকে ১১ হাজার ২০৬ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনার সূত্রপাত মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকার এক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের দোকানে। কিন্তু আম্মাজান টেলিটক নামের ওই দোকানের মালিক ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘আমি এ বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানি না। হ্যাকাররা এমন করতে পারে।’ তবে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, এজেন্টদের তথ্য কী করে এত সহজে প্রতারকরা পেয়ে যায়।
র্যাব সূত্র জানায়, গত মাসে এ ধরনের প্রতারণায় জড়িত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতারকরা একের পর এক কৌশলে কাজটি করে থাকে। এ কারণে অনেক বিচক্ষণ লোকও বোকা বনে যায়।
পলাশ জানান, ওই এজেন্ট থেকে নিজের অ্যাকাউন্টে এক হাজার টাকা ভরেন তিনি। যথারীতি ক্যাশ ইনের মেসেজ আসে। এরপর এজেন্ট পরিচয়ে ০১৮১৯-৭৭৪৭৬১ নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, ওই দোকান থেকে এক নারী নিজ অ্যাকাউন্টে ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে জাল টাকা দিয়ে গেছেন, কিন্তু দোকানির ভাই ভুলে খাতার ওপরের দিকে থাকা পলাশের নম্বরটির বিষয়ে অফিসে অভিযোগ করেছেন। তাই তাঁর আইডি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন অফিস থেকে ০১৬ দিয়ে শুরু হওয়া একটি নম্বর থেকে তাঁর মোবাইলে কল যাবে এবং তখন যা যা করতে বলে তাই তাঁকে করতে হবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই +১৬২৪৭ নম্বর থেকে কল আসে পলাশের নম্বরে। পরে লাইন কেটে যায়। এরপর ০১৬০১-৯৬৪৫৮২ নম্বর থেকে কল করে জানানো হয়, একটি কোড নম্বর মোবাইলে যাবে, যা ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বলতে হবে। ওই কোড বলার পর লাইনে থাকা অবস্থায়ই ১০ হাজার টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে ঢোকাতে হবে। এরপর ওই নম্বরে টানা ৩৬ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড কথা বলার পর পলাশ তাদের কথামতো টাকা পাঠানোর পর দেখেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট এবার সত্যি সত্যি বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু সময় পর আবার ওই দোকানি পরিচয়ে ফোন করে জানায়, তাঁরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাঁদের অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকচক্র। দোকানি পরিচয় দেওয়া সেই মোবাইল নম্বরটিও এখন বন্ধ।
আম্মাজান টেলিকমের মালিক রিপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হ্যাকাররা কেমনে নম্বর পেয়ে যায়, বুঝি না। আমরা কাদের সঙ্গে লেনদেন করছি, কত টাকা পাঠাচ্ছি, সব তথ্য তারা পেয়ে যায়। পরে আমাদের পরিচয় দিয়ে কাস্টমারের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়।’ তিনি নিজেই এমনটা করেছেন কি না, জানতে চাইলে রিপন বলেন, ‘যে নম্বর থেকে রিং দেওয়া হয়েছে সেই নম্বরের খবর নিলেই তো সত্য জানা যাবে। তাই আপনার যা মন চায় করেন।’
এ সম্পর্কে বিকাশের কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান সামসুদ্দিন হায়দার ডালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, কে কত লেনদেন করছে, এটা আসলে হ্যাকারদের জানার বিষয় নয়। এজেন্টের আশপাশে কিছু লোক ঘোরাঘুরি করে। তারা কখন কার অ্যাকাউন্টে টাকা গেল-এলো সেই খবর রাখে। এজেন্ট পয়েন্টে যখন কেউ টাকা দেয় তখন একটু গোপনে দেওয়া গেলে হয়তো সমস্যা থেকে বাঁচা যেত। কোনোভাবেই নিজের পিন নম্বর ও পাসওয়ার্ড দেওয়া যাবে না। প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিলে কিছুই করার থাকে না।
সূত্র- কালের কন্ঠ