যথাযোগ্য মর্যাদায় দামুড়হুদায় শনিবার স্থানীয় আট স্মৃতি শহীদ দিবস পালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদা মাঠে ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিল।
আজ শনিবার সকাল ৯টার সময় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক হুইপ চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: সোলাইমান হক জোয়াদ্দার সেলুন, মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড: কিসিঞ্জার চাকমা, কালো পতাকা উত্তোলন করেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
পরে শহীদ বেদিতে পুস্তক অর্পণ করেন চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের সাংসদ, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা আওয়ামী লীগ, দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসন, শহীদ পরিবারের সন্তানরা, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ, জেলা মহিলা লীগ, জেলা যুবলীগ, জেলা ছাত্র লীগসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং শহীদের জন্য দোয়া মাহফিল করা হয়।
পরে জেলা আওয়ামী ও জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মো: সোলাইমান হক জোয়াদ্দার সেলুনের সভাপতিত্বে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম মালিক, আজগর ফটিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম টোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হান্নান, মাসুদুর রহমান লিটু, আ,লীগ নেতা ও শিল্প পতি রাজ্জাক খান, আব্দুল হাকিম প্রমুখ। জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ, স্থানীয় প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের স্মরনে প্রতিবছর এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যদার সাথে প্রতি বছর দিবসটি পালন করে আসছে।
যুদ্ধহত অবস্থায় বেচে যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগার ফটিক স্মৃতি চারণ বক্তব্য বলেন, দামুড়হুদা-মেহেরপুরের মাঝামাঝি একটি গ্রাম জয়পুরে ১৯৭১ সালে ৫ আগষ্ট যখন মুক্তিযোদ্ধারা ঘুমিয়ে ছিল, ঠিক তখনি ছদ্দবেশী একজন খবর দিল যে দামুড়হুদার নাটুদা মাঠের সব পাকাধান পাকবাহিনীরা জোর পুর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এই সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা কিছু না বুঝেই দলবেধে দ্রত ঘটনাস্হলে পৌঁছে। পরে দেখা গেল কিছুই না, তারা রাজাকারের কৌশলে পাকবাহিনীর ফাদে পা দিয়েছে। এসময় পরিস্থিতি বুঝতে একজন মুক্তিযোদ্ধা ফাঁকা গুলি ছুড়লে। তখন ইউ আকৃতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলা পাকসেনারা শত শত রাউন্ড গুলি ছুড়তে থাকে। এসময় পরিস্থিতি বেগতিক পিছানোর কোন পথ নেই বুঝতে পেরে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়।
গোলাপুলির এক পর্যায়ে দামুড়হুদার নাটুদা স্কুলে পাকসেনাদের ক্যাম্প থেকে আরো পাকসেনা পিছন থেকে অগ্রসর হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে বৃষ্টিমত গুলি ছোড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচতে হলে মুভ করতে হবে, মুক্তিযোদ্ধারাও গুলি চালাতে চালাতে ক্লান্ত প্রায়। এর ফাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হাসান এর ডানহাতে গুলি লাগে, হাত গামছা দিয়ে বেধে গুলি চালাতে থাকে, কতক্ষণ প্রশিক্ষিত একটি বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ চালানো যায়। হাসান সকলের পিছুটান দেয়ার কথা বলেই মৃত্যু বরন করলেন, পিছু হটার সাথে সাথে পাকসেনারা তাদের ধরে গুলি ও বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তারিক, আফাজ, খোকন, আবুল কাশেম, রবিউল, রওশন, কিয়ামদ্দিন ও হাসানকে গুলি করে হত্যা করে। দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য নিঃশেষে প্রানদান করে শহীদ হন ৮ বীরমুক্তিযোদ্ধা।
জেলা ও দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামীলীগ, মক্তিযোদ্ধা সংসদ স্বাধীনতারপর থেকে এই ৮ শহীদের স্মরনে প্রতিবছর এই দিবসটিকে স্থানীয় শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এখানে স্থানীয় শহীদ দিবস পালনে সকাল থেকে কোরান তেলাওয়াত, বিশেষ আলোচনা দোয়া ও কাঙালি ভোজের ব্যবস্থা করা হয়।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা উপজেলা আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ ও শহীদ পরিবারের আত্মীয় স্বজন এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগন উপস্তিত থেকে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান।