প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে ইতোমধ্যে দিশেহারা বিশ্ববাসী। এর তাণ্ডবে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশ ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্স। বর্তমানে ভাইরাসটি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে প্রলয়ঙ্করী তাণ্ডব চালাচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে।
তবে বর্তমানে ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানিতে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে করোনাভাইরাস প্রকোপ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার জেরে ইউরোপের অনেক দেশেও চলছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। এসব গণসমাবেশের কারণে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই অঞ্চলে করোনাভাইরাস মহামারী দ্বিতীয় ধাপে প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ইউরোপের বড় বড় শহরগুলোতে যখন বিশাল জনসমাবেশ করে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ চলছে তখনই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে এমন উদ্বেগের পূর্বাভাস আসলো।
এমনকি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হতে পারে।
গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেপোলিসে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার গলায় হাঁটু চাপা দিয়ে নৃসংশভাবে হত্যা করে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে। মৃত্যুর সময় তার কথা ছিল- “আই কান্ট ব্রিথ”। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার এই স্লোগানে বিশ্বজুড়ে চলছে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন।
আর এই আন্দোলন করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির পথে থাকা ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য কাল হতে পারে বলে ইউরোপের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিকেরা।
‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন’ এর প্রধান জোজেফ কেসেসিওগ্লু বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রত্যেককেই যখন একে অপরের কাছ থেকে দেড় মিটার দূরে থাকতে বলা হচ্ছে, ঠিক তখনই প্রত্যেকে একে অপরের পাশাপাশি অবস্থান করছে; একে অপরকে স্পর্শ করছে- এটা মোটেও ভালো ব্যাপার নয়।”
এর ফলে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, তবে আশা করব আমার এ কথা যেন ভুল প্রমাণিত হয়।”
২৭ সদস্য দেশের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশই এরই মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারির সর্বোচ্চ মাত্রা পার করে আসার পথে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সর্বাধিক।
আক্রান্তের বৈশ্বিক তালিকায় চতুর্থস্থানে আছে যুক্তরাজ্য, ২ লাখ ৯২ হাজার। এরপর আছে ইতালি, ২ লাখ ৩৫ হাজার; এরপর যথাক্রমে আছে ফ্রান্স (১ লাখ ৯২ হাজার) ও জার্মানি (১ লাখ ৮৫ হাজার)।
বিজ্ঞানীরা আগেই পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, ইউরোপে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ শুরু হতে পারে গ্রীষ্ম শেষে। কিন্তু বিক্ষোভের কারণে ব্যাপক জনসমাবেশের কারণে তা আরও আগেভাগে শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইইউ’র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মার্টিন সেশিল বলেন, “শ্বাস প্রশ্বাস জনিত যেকোনো রোগ ছড়ানোর অন্যতম উপায় হলো জনসমাগম।”
এ ব্যাপারে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, “ছয়জনের বেশি মানুষের জমায়েতে লোকজনের অংশ নেওয়া উচিত নয়। সেটি যদি বিক্ষোভও হয় তাতেও না।” সূত্র-যুগান্তর