দেশে নারী নির্যাতন চলছে, নির্যাতনের অনেক ধরণও পালটিয়েছে। বিশেষ করে করোনা দুর্যোগে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকাংশে।
জানাগেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের কাউসার আলীর ছেলে সুমন রেজা, যার নেশায় হলো বিয়ে করে স্ত্রীর কাছ থেকে যৌতুক আদায় করা। না দিলে তালাক দেওয়া, সুমন বছর পাঁচেক আগে পিরোজপুর গ্রামের ফজলু রহমানের মেয়ে মিলার সাথে বিয়ে করে। তাদের ১টি পুত্র সন্তান আছে, স্ত্রী পক্ষ থেকে যৌতুক না দেওয়ায় মারধোর করে তাড়িয়ে দেয়, এবং একপর্যায়ে তাকে তালাক দেয়।
পুনরায় বছর দেড়েক আগে আবার সে মুজিবনগরের এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর সাথে পূর্বের তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী সন্তানের কথা গোপন রাখে এবং কৃষি ব্যাংকের ফিল্ড অফিসার পরিচয় দিয়ে ২য় বিয়ে করে। বিয়ের বয়স ৬ মাস পার না হতে যৌতুকের দাবীতে স্বামী সুমন ও শাশুড়ি সোনাভানু স্ত্রী শিরিনাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
কোন মতে জমি জায়গা বিক্রি করে গরীব বাবা মেয়ের সুখের জন্য দুই বারে দেড় লাখ টাকা সহ মেয়েকে স্বামীর বাড়ী পাঠিয়ে দেয়। কিছুদিন সংসার চলার পর ৬ মাস হতে না হতে আবারো মারধোর, নির্যাতন চলে গৃহবধূ উপর। তাকে বিভিন্ন সমিতি থেকে টাকা তুলে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে অত্যাচারে সে স্বামীর বাড়ীতে থেকে মাস দেড়েক আগে বাবার বাড়ী চলে যায়।
স্ত্রী শিরিনাকে স্বামী সুমন রেজা নানাভাবে হুমকি দেয় এবং বলে “তুই যদি টাকা না আনিস তাহলে চুরির মামলা দিয়ে টাকা আদায় করবো”। এতে শিরিনা রাজি না হওয়ায় সুমন রেজা স্ত্রী শিরিনা আক্তার, শ্বশুর মুনছুর আলী, শাশুড়ী রশিদা খাতুন ও শ্যালক আশিক আলি এই ৪ জনের নামে নগদ অর্থ ও গয়নাগাটি চুরির অভিযোগ এনে গত ২১/০৯/২০২০ইং তারিখ মেহেরপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-সিআর ২৯২/২০।
এদিকে গৃহবধূ শিরিনাকে বিভিন্নভাবে অপহরণ ও হত্যার হুমকিসহ অফিসে যাওয়ার পথে তাকে প্রায় নাজেহাল ও হয়রানি করার অভিযোগে এর প্রতিকার চেয়ে গৃহবধূ শিরিনা ২৭/১০/২০২০ইং তারিখে মেহেরপুর সদর থানার ইনচার্জ বরাবর স্বামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন গুলোর কাছে গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন ও আইনগত সহয়তা চাওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন মানব উন্নয়ন কেন্দ্র (মউক) -এর লিগাল এইড এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার কাজল রেখা জানান, আমরা উক্ত গৃহবধূর কাছ থেকে স্বামী কর্তৃক নির্যাতন সহ বিভিন্ন হয়রানির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত সুমনের গ্রামে অধিকতর তদন্ত করি এবং সুমনের সাথে কথা বলি, তাতে তথ্যানুসন্ধান টিমের কাছে অভিযোগকারীর ঘটনার সত্যতার প্রমাণ মিলেছে, ফলে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও আইনগত সহায়তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।