রমনার অশ্বত্থমূলে সেই ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানট আয়োজন করে আসছে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। বাংলা নতুন বছরের প্রথম সূর্যের আলো ফোটার ক্ষণটিতে সমবেত কণ্ঠে শিল্পীরা প্রতিবছর গেয়ে ওঠেন আবাহনী গান। শুরুতে আয়োজনটা ছোটই ছিল। ষাটের দশকে তোলা রমনা বটমূলের বর্ষবরণের আয়োজনের সাদাকালো ছবিতে দেখা যাচ্ছে কুড়িজনের মতো শিল্পী, সনজীদা খাতুনের হাতে হারমোনিয়াম, কিন্তু দর্শকশ্রোতার সংখ্যা কম নয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তখন ধাবিত হচ্ছে স্বাধিকার আন্দোলনের স্রোতোরেখা ধরে স্বাধীনতার মোহনায়। মানুষ তাই প্রাণের টানে ছুটে যেত রমনায়।
স্বাধীনতার পর পয়লা বৈশাখ পেল সাধারণ ছুটির দিনের মর্যাদা। ধীরে ধীরে বাংলা নববর্ষ হয়ে উঠল বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উৎসবের দিন। আর সারা দেশে হাজার হাজার আয়োজন। ঘরে ঘরে রান্না হচ্ছে বিশেষ খাবার। ধনী–গরিব সবার পরনে সাধ্যমতো নতুন পোশাক; শাড়ি কিংবা পাঞ্জাবি। নদীর ধারে গ্রাম্য মেলা থেকে শুরু করে নাগরিক জীবনের করপোরেট আয়োজন। হালখাতা, লোকসংগীত থেকে শুরু করে কনসার্ট। হাজারো কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত। কিন্তু রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজনই প্রধান আকর্ষণ। একবারই শুধু আয়োজিত হয়নি এই বটমূলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। ১৯৭১-এ। তারপর, এমনকি ২০০১ সালে জঙ্গিবোমায় মানুষের মৃত্যুও কোনো বছর ছেদ ঘটাতে পারেনি রমনার বর্ষবরণ আয়োজনে।
এবার রমনার অশ্বত্থতলা বিরান। কোনো আয়োজন নেই। মানুষের পদস্পর্শশূন্য উদ্যানের ঘাসগুলো বাড়ছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। বটের মূলে নদীর কূলে সোনার বাংলার আঁচল বিছানো আছে, সেই ছায়া আছে, মায়া আছে, শুধু মানুষ নেই। ১৪২৭–এর নববর্ষের প্রথম প্রহরে রমনা পড়ে আছে ধু ধু, সুনসান।
একাত্তরে একটা গান আমাদের বুকে ভরসা জোগাত:
আবার জমবে মেলা বটতলা হাট খোলা
অঘ্রানে নবান্নে উৎসবে
সোনার বাংলা ভরে উঠবে সোনায়
বিশ্ব অবাক চেয়ে রবে।।
মানুষ নিশ্চয়ই বিজয়ী হবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে। আবারও আমরা মুখর হব নবান্নের উৎসবে, নববর্ষ বরণে, স্বাধীনতা দিবসে। ছায়ানটের ৫৩তম বর্ষবরণের আয়োজন রমনার বটমূলে মানুষের উপস্থিতিতে হতে পারল না। ৫৪তম বর্ষে এসে আমরা দ্বিগুণ হব। সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন