সিলগালা করা রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চিকিৎসা যন্ত্রপাতি রয়েছে। এগুলো ফেরত চেয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরেজ ডিপোট (সিএমএসডি বা কেন্দ্রীয় ঔষধাগার)। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় এবং প্রতারণার অভিযোগে সম্প্রতি হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
১৩ জুলাই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে লেখা এক চিঠিতে সিএমএসডি পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, ‘সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেছে। কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া ইত্যাদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল পরিচালনার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে অবৈধ ঘোষণা ও সিলগালা করে। ওই হাসপাতালের অনেক কর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। বর্তমানে হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নিবন্ধন না থাকা সত্ত্বেও অবৈধ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।’
সিএমএসডি পরিচালক চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, ‘গত ৭ মে সিএমএসডির পূর্বতন প্রশাসন রিজেন্ট হাসপাতালের অনুকূলে দুটি ডায়ালাইসিস মেশিন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ডিসটিলড) একটি, আইসিইউ ভেন্টিলেটর দুটি এবং দুটি ডায়ালাইসিস বেড প্রদান করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সিলগালা অবস্থায় আছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থায় থাকলে সরবরাহকৃত মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া সরকারি অর্থে ক্রয়কৃত সরকারি মালামাল একটি অবৈধ প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার কোনোভাবেই সমীচীন ও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই জরুরিভিত্তিতে উক্ত মলামাল সিএমএসডিতে ফেরত আনা দরকার।’
তিনি জরুরিভিত্তিতে এসব মালামাল ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিবকে অনুরোধ করেন।
চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালককে (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রীকে জানানো হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. আমিনুল হাসান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সিএমএসডি থেকে সরাসরি এসব মালামাল রিজেন্ট হাসপাতালকে দেয়া হয়। এর সঙ্গে তার দফতরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, অভিযানের পূর্বে রিজেন্ট হাসপাতালের পক্ষ থেকে দুটি হাসপাতালের জন্য দুই কোটি ছয় লাখ টাকার বিল জমা দেয়া হয়েছিল। যদিও মেশিনপত্র, চিকিৎসক সবই ছিল সরকারি। এছাড়া রোগীদের সব সেবা বিনামূল্যে দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে সব ধরনের বিল নেয়া হতো। শুধু তাই নয়, রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষার মধ্যে ৬ হাজারই ভুয়া রিপোর্ট ছিল বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্র- যুগান্তর