কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির বিবেচনায় ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে দেশের যেসব অঞ্চলে জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সেসব এলাকায় সেনা টহল জোরদার করা হচ্ছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) মঙ্গলবার এক বার্তায় বলেছে, রেড জোনসমূহে সরকারি নির্দেশনাবলি যথাযথ পালনের উদ্দেশ্যে সেনা টহল জোরদার করা হচ্ছে।
সরকার রাজধানীর ৪৫ এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও সব প্রস্তুতি সেরে সেসব এলাকা অবরুদ্ধ করতে আরও সময় লাগবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইএসপিআরের পরিচালক আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ জানান, সেসব স্থানে রেড জোন হবে, সেসব স্থানে সরকারের অন্যান্য প্রশাসনের সঙ্গে সমম্বয় করে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে সেনাবাহিনী।
তিনি বলেন, ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী কাজ করবে।
সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনায় রেড ও ইয়েলো জোনে সাধারণ ছুটি থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত অফিস, গণপরিবহনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হবে এবং কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে সেই বিষয়ে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, লাল ও হলুদ অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক-অসামরিক সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি দফতরসমূহ এবং লাল ও হলুদ অঞ্চলে বসবাসকারী বর্ণিত দফতরের কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে ২৪ মার্চ থেকে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে রয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার দুই মাসের বেশি সময় সারাদেশে লকডাউন জারি রাখার পর ৩১ মে থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয় সরকার।
তবে এর পর প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এলাকা ধরে ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনুযায়ী লাল, সবুজ ও হলুদ জোনে ভাগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।
সে অনুযায়ী গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার কিছু এলাকা এবং ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে ‘পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। ঢাকার ওয়ারীতেও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে এলাকা চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির শনিবারের সভায় দেশের ‘রেড জোন’গুলো চিহ্নিত করে। তাতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৪৫টি এলাকা সর্বোচ্চ ঝুঁকির ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
ঢাকার রেড জোন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৮টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ এসব এলাকায় প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার মধ্যে গত ১৪ দিনে ৬০ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ: যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেণ্ডারিয়া, ধানমণ্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলী, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরীবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।
ঢাকা উত্তর: বসুন্ধরা, গুলশান, বাড্ডা, ঢাকা সেনানিবাস, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা, মিরপুর। সূত্র-যুগান্তর