কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে হাত বাড়ালেই মিলছে বাংলাদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সিম। মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গারা পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি সিম ও নম্বর। পরে ওই নম্বরগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক ও মানব পাচারসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে। রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা ওইসব নম্বরের সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হোঁচট খেতে হচ্ছে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশি সিম অবৈধভাবে কারা রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দিচ্ছে তা তদন্ত করা হবে। অবৈধ এ কারবারে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মেট্রো মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার কাছ থেকে বাংলাদেশি মোবাইল ও সিম জব্দ করা হয়।
তদন্ত করে দেখা যায়, ওই সিম নম্বরটি বাংলাদেশি নাগরিকের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। মোবাইল নম্বর ও সিম জরুরি হলেও অন্যজনের নামে রেজিস্ট্রেশন হওয়ার কারণে তদন্তে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।’
তিনি দুটি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া দুজনের কাছ থেকে বাংলাদেশি সিম জব্দ করা হয়। তদন্ত করে দেখা যায়, সিম দুটি বাংলাদেশি একজন নারী ও পুরুষের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দুই নম্বরের বিষয়ে তারা আদৌ জানেন না। রোহিঙ্গাদের হাতে কীভাবে তাদের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম গেল তা তদন্ত করা হচ্ছে।’
জানা যায়, কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাংলাদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সিম বিক্রি চক্র। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি, দালাল চক্রের সদস্য এবং বাংলাদেশি কিছু ব্যক্তি। মূলত বাংলাদেশি নাগরিকরাই বিভিন্ন জনের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন করা সিম সংগ্রহ করে।
পরবর্তীতে তা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দালালদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একেকটি সিম বিক্রি হয় ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকায়। পরে ওই নম্বর দিয়ে মাদক ও মানব পাচারসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডের যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, গত দুই মাসে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ কমপক্ষে ২০ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ইয়াবার পাশাপাশি বাংলাদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সিমও জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের দাবি- রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দালাল চক্রের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে তারা সিম সংগ্রহ করেছে। তারা এসব সিমের নম্বর দিয়ে মাদক পরিবহনের সময় ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।
মাদক পরিবহনের কাজে একটি নম্বর একবারই ব্যবহার করে। মাদক পাচারের সময় একবার নম্বর ব্যবহার করার পর তা নষ্ট করে ফেলা হয়। পরের চালানের জন্য আরেকটা নতুন সিম নেওয়া হয়।