অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। কিন্তু সেই সাক্ষী তিন জনকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা অপহরণ করেছে মর্মে মামলা নথিভুক্ত করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ।
অথচ সেই সাক্ষীরা সিনহা হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে কারান্তরীণ হয়। তাদের সাত দিন করে রিমান্ডও মঞ্জুর করেছে আদালত। এ ঘটনার পর র্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সিনহা হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত।
তাদের মতে, ঘটনার দিন পুলিশের পক্ষ থেকে যে অভিযান চালানো হয়েছিল, সেটিও অবৈধ ছিল। কারণ বিধান অনুযায়ী ইউনিফর্ম পরে অভিযান চালানোর কথা; কিন্তু তা করা হয়নি। পাশাপাশি মেজর (অব.) সিনহাকে পুলিশের চেকপোস্টে গুলি করা হয়েছে বলে এতদিন প্রচার করা হলেও সেটি সত্য ছিল না। তাকে যে চেকপোস্টে গুলি করা হয়েছে, সেটি ছিল আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন)। অযাচিতভাবে পুলিশ সেখানে গিয়ে গুলি চালিয়েছে। এসব বিষয় উঠে আসছে দেখে হয়তো তদন্ত বিঘ্ন করতে সাক্ষীদের অপহরণ করা হয়েছে বলে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, র্যাব মঙ্গলবার যে তিন আসামিকে (মো. আয়াছ, নুরুল আমিন ও নাজিমুদ্দিন) গ্রেফতার করেছে তাদের বাড়িতে গিয়ে আসামির স্বজনকে দিয়ে অপহরণের মামলা করতে বাধ্য করে টেকনাফ থানা পুলিশ। ঐ তিন জন ছিলেন পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী।
সিনহা হত্যার পর পুলিশের সাক্ষী নুরুল আমিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হত্যাকাণ্ডটি তিনি নিজের চোখে দেখেননি। ঘটনাটি তিনি শোনেনওনি। কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই তাকে সাক্ষী বানিয়েছে পুলিশ। মো. আয়াছ বলেছিলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় সাক্ষী হইনি। আমি সেদিন চেকপোস্টেই যাইনি।’
সোমবার বিকালে এই দুই সাক্ষীসহ অপর সাক্ষী নাজিমুদ্দিনের বাসায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। পরদিন মঙ্গলবার সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এর আগের দিন সোমবার মধ্যরাতে ঐ তিন জনের বাড়িতে গিয়ে টেকনাফ থানা পুলিশ তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপহরণ মামলা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঐ তিন আসামি গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা যেতে না-যেতেই পুলিশ কেন অতি উত্সাহী হয়ে মামলা করল? এ ব্যাপারে জানতে টেকনাফের ওসির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সিনহা হত্যার তদন্তের বিষয় ঘিরে র্যাব ও পুলিশের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে কি না, গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, র্যাব এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত ও অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে করতে চায়। কাজেই এটি নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান।
সূত্র- ইত্তেফাক