: করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। আজ সকাল থেকে শুরু করে ৭ জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এই লকডাউন। কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে কুষ্টিয়ায় মানুষের চলাচল কমেছে; ফলে অনেকটাই ফাঁকা ফাঁকা দেখো গেছে শহরও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। অবশ্য সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হতে হতে দুপুর পর্যন্ত ভারী বর্ষণের ফলে রাস্তায় মানুষের তেমন দেখা নেই।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে তারা টহল দিচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, গণপরিবহনসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও জরুরি সেবার আওতায় থাকা যানবাহন চলাচল করছে। তবে ইজিবাইকের পাশাপাশি শহরের মধ্যে রিকশা চলতে দেখা গেছে।
সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকায় মানুষের যাতায়াত কিছুটা কমেছে। যাঁরা জরুরি পেশার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা বের হয়েছেন।
তবে সবাইকে পুলিশের চেকপোস্টের মুখে পড়তে হচ্ছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাচ্ছি মিরপুর উপজেলার নওপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হালিম।
তিনি বলেন, ইজিবাইকে করে তার অসুস্থ্য বোনকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। তবে পথিমধ্যে বারখাদা ত্রিমোহনী, মঙ্গলবাড়ীয়া আলফার মোড়ে, ও মজমপুরে পুলিশের চেকপোস্টের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের।
এদিকে মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ বাজারে দোকান খোলা রাখার অপরাধে দুজনকে আটক করে পুলিশ।।
এদিকে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) খাইরুল আলমের নেতৃত্বে লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বুধবার রাতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।
জেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, শপিংমল, দোকান, রেস্তোরাঁ ও চায়ের দোকান বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় (মুদি) পণ্যের দোকান ও ওষুধের দোকান সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে।
লকডাউন চলাকালে সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। এছাড়া ইজিবাইক, থ্রি–হুইলারসহ সব যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ থাকবে। এ সময় সব সাপ্তাহিক হাট ও গরুর হাট বন্ধ থাকবে।
ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা, চিকিৎসাসেবা, মরদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হবেন, তাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা (কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, গণমাধ্যম, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি তেল, ফায়ার সার্ভিস) চালু থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম লকডাউনের সময় সবাইকে এসব বিধিনিষেধ মেনে চলার নির্দেশ দেন। অন্যথায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৩০ নমুনা পরীক্ষায় ৩২৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) অস্তিত্ব মিলেছে। জেলায় এটিই এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এছাড়াও এই সময়ের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫০ জন এবং মারা গেছেন ২১১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৫৩৫ জন।