ঢাকাই সিনেমার মুভি লর্ড খ্যাত মনোয়ার হোসেন ডিপজল বরাবরই দেশের চলচ্চিত্রের স্বার্থে বিদেশি ভাষা বিশেষ করে হিন্দি ভাষার সিনেমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছেন। তার কথা, হিন্দি সিনেমা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে যায় না। আমাদের সাধারণ দর্শক আমাদের দেশের সিনেমা দেখতে পছন্দ করে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও চেনা-জানা পরিবেশ এবং ভাষার সিনেমা দেখতে চায়। তা না হলে, আমাদের চলচ্চিত্র এতো সমৃদ্ধি লাভ করতে পারতো না।
আগামী ১২ মে দেশে বলিউড বাদশা শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ সিনেমাটি মুক্তি পাবে। শুরু থেকেই সিনেমাটির মুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন ডিপজল। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনে বক্তব্য দিয়েছেন। ভারতের পত্রিকা ইন্ডিয়ান টাইমস-এও তার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, হিন্দি সিনেমায় অনেক অশালীন দৃশ্য থাকে যা আমাদের দেশের সংস্কৃতির পরিপন্থী। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর অবশেষে ‘পাঠান’ মুক্তির তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডিপজল বলেন, আমি মনে করি, ‘পাঠান’ মুক্তি পেলেও সেটা আমাদের দেশে চলবে না। দর্শক সাড়া দেবে না। আমাদের সিনেমার দর্শক আলাদা। সিনেমার মূল ব্যবসা মূলত মফস্বল শহরের সিনেমা হলগুলো থেকে হয়। সেখানেই দর্শক বেশি। তারা হিন্দি বোঝে না। ডাবিং করে চালালেও তা গ্রহণ করে না। সিনেপ্লেক্সের দর্শক আলাদা। সেখানে যে পরিমাণ দর্শক হয়, তা দিয়ে সিনেমার পুঁজি উঠে না। ইতোমধ্যে এক শ্রেণির দর্শক ‘পাঠান’ দেখে ফেলেছে। নতুন করে তাদের দেখার কিছু নেই।
চ্যালেঞ্জ দিয়ে এ অভিনেতা বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, ‘পাঠান’ আমাদের দেশে চলবে না। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কারণ, আমি সিনেমা বানাই, বিনিয়োগ করি, সিনেমা চালাই, হল চালাই। আমাদের দর্শক কি সিনেমা দেখতে চায়, আমার তিন দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি দর্শকের চহিদা বুঝতে পারি।
নিজের সিনেমার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও আমার অভিনীত সিনেমা টিভিতে চালালে দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়ে। হিসাব করলে দেখা যাবে, আমার সিনেমাগুলোর দর্শক সবচেয়ে বেশি। কাজেই, দর্শক কি ধরনের সিনেমা পছন্দ করে তা আমার পক্ষে বুঝতে অসুবিধা হয় না। এই অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি, ‘পাঠান’ কেনো অন্য কোনো হিন্দি বা বিদেশি সিনেমা আমাদের দেশে চলবে না।
ডিপজল বলেন, বাংলা ভাষা ও আমাদের সংস্কৃতির প্রতি দর্শকের মায়া বেশি। তারা চায়, আমাদের ভাষাতেই সিনেমা হোক। চলচ্চিত্রের মন্দাবস্থার মধ্যেও এবারের ঈদে ৮টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাগুলো আশার চেয়েও ভালো ব্যবসা করেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, আমরা দর্শকের মন বুঝে সিনেমা বানাতে পারলে দর্শক সাড়া দেয়।
ডিপজল অভিনীত বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায়। সে কথা জানিয়ে বলেন, আমার ছয়-সাতটি সিনেমা রেডি আছে। এগুলো একের পর এক মুক্তি দেওয়া হবে। আমি মনে করি, এতে দর্শক আরও বেশি হলমুখী হবে। আরও অনেকে সিনেমা নির্মাণ করছেন। এখন সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় যতোই হিন্দি বা বিদেশি সিনেমা মুক্তি দেওয়া হোক না কেনো, সেগুলো চলবে না।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ২০০১ সালে অমিতাভ ও শাহরুখ খান অভিনীত সুপারহিট সিনেমা ‘কাভি খুশি কাভি গম’ সিনেমাও আমাদের দেশে চালানো হয়েছিলো। সেটা চলেনি। কাজেই, পাঠানও চলবে না।
ডিপজল চ্যালেঞ্জ জানালেও ‘পাঠান’ নিয়ে বেশ আশাবাদী এটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট। তাদের মতে, ‘পাঠান’ হচ্ছে বড় পর্দায় দেখার মতো ছবি। ওটিটিতে দেখলেও বাংলাদেশি দর্শকেরা ছবিটি সিনেমা হলের পর্দায় দেখতে মুখিয়ে আছেন।