প্রতিটি সন্তানই তার বাবা-মায়ের কাছে অতি আদরের ধন। সন্তানের
দুর্দিন মানেই বাবা-মায়ের চোখে জল। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা
ছাতিয়ান ইউপির কালিতলা এলাকায় আদরের ছেলেকে নিয়ে যন্ত্রণাময়
জীবন যাপন করছেন জসিম উদ্দিন-সীমা দম্পতি।
তারা না পারছেন ছেলের কষ্ট সহ্য করতে, না মেনে নিতে পারছেন ছেলের
দেয়া অসহনীয় যন্ত্রণা। যে ছেলেকে কোলে তুলে নিতে মন প্রাণ ব্যাকুল
থাকে, বাধ্য হয়ে সেই ছেলেকে ঠেলে দিয়েছেন নির্মম এক শিকলে
বাঁধা জীবনে।
বাবা-মা অনেক কষ্ট নিয়ে বলেন, জন্মের সময় তার আদরের ছেলেটি খুবই
শান্ত স্বভাবের ছিল। তাই তার নাম রাখা হয়েছিল শান্ত। আশা ছিল শান্ত
স্বভাব নিয়েই সে বড় হবে। এখন তার বয়স ৯ বছর তিন মাস। কিন্তু
ঘটনা ঘটলো প্রত্যাশার ঠিক উল্টো। আচার আচরণে সবকিছুতে তার
এখন শুধু অস্বস্তি। কিছুতেই স্থির থাকতে পারে না সে। সুযোগে
পেলেই প্রতিবেশীর ঘরে ঢিল মারে, মেরে ফেলতে যায় ছোট ভাইকেও। তাই
শান্ত পাঁচ বছর ধরে শিকলে বাঁধা জীবনযাপন করছে।
তারা আরো বলেন, প্রান্তিক কৃষক পরিবারে তাদের ছেলে এখন বোঝা।
ছেলের আচরণ সহ্য করতে না পারছে না তার পরিবারসহ প্রতিবেশীরাও।
তাই রাত হলেই ছেলেকে নির্জন বাঁশ বাগানে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা
হয়। শান্তের চিকিৎসার খরচ চালাতে ব্যর্থ তারা।
বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, জন্মের পরে আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি।
তবে তিন বছর বয়সে তার অবস্থা বুঝতে পারি। সে প্রথমে রান্না ঘরের
গোবরের দেয়া লাঠি (গরুর গোবর দিয়ে তৈরী জ্বালানী) খেতে শুরু করে।
বাড়ির পাশের ময়লা-আবর্জনা, মাটি, সাবানের ফেনা, কলা গাছ, কপির
ডাটা, জামের বিচি খেতে দেখে আমি অবাক হই। এরপর আমি ২০১৪
সালে রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। আমি পেশায় একজন
দিনমজুর। বর্গা নিয়ে চাষ করি ও অন্যের জমিতে লেবার দিয়ে সংসার
চালায়। ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, একবেলা খাই তো অন্য উপোস। ছেলেকে চিকিৎসা
করানোর মতো ক্ষমতা আমার নেই। শান্ত ঘুমাতে দেয় না। রাত ২টায়
ঘুমায়। প্রতিবেশীদের রাতে ঢিল ছুঁড়ে। তাই দিনে ১৫-১৬ ঘণ্টা বাঁধা
থাকে। আমার এই সন্তানের চিকিৎসা করার জন্য আমি সমাজের
বিত্তবানদের প্রতি সাহায্যের আবেদন করছি। আমার নগদ হিসাব নম্বর-
০১৯২৩০৭৪৭০৭। আমি বর্তমানে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি।
শান্তের মা সিমা খাতুন বলেন, শান্ত রাতে ঘুমাতে দেয় না। আমার ছোট
ছেলেকে একাধিকবার মেরে ফেলতে গিয়েছিলো। নিজের সন্তানকে
বাঁধা কোনো মায়ের পক্ষেই সহ্য করা সম্ভব না।
শান্ত কারো সঙ্গে কথা বলে না। তার নাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারে না।
এলাকার সচেতন মহলের প্রশ্ন এই শান্ত কী সারাজীবন এমনই থাকবে।
তার কী কোনো চিকিৎসা নেই। সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে কবে ফিরবে সে
বাবা-মায়ের কোলে।
ছাতিয়ান ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, শান্তর
প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করা হয়েছে। পরিষদ থেকে এ পরিবারকে সরকারি
সব প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমি
ব্যক্তিগতভাবে সাহায্যে করি। আসলে শান্ত একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু।
এ লকডাউন উঠে গেলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো
হবে।
মিরপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জামশেদ আলী বলেন,
সমাজসেবা অধিদফতর থেকে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেয়া হয়েছে।
সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার পরিপত্র আসলে তাহলে
তাকে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।