এম এফ রুপক
শীতকালীন সবজিতে বাম্পার ফলন হলেও হতাশ হয়ে পড়েছে মেহেরপুরের সবজি চাষিরা। উৎপাদন খরচের অর্ধেকও ফিরে পাচ্ছেন না চাষিরা। অনেকে জমি থেকে সবজি সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছেন। উৎপাদন খরচ ফিরে পেতে পাইকারি দরে বিক্রি না করে অনেকেই ফেরি করে বিক্রি করছেন সবজি। কেউ কেউ আবার নামমাত্র সংগ্রহ করে জমি চাষ করে ফেলছে।
বিশেষ করে পাতাকপি, ফুলকপি, ওল (বিট) কপি, মূলাতে বিঘা প্রতি ৫-৭ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের “ভেজিটেবল জোন” খ্যাত মেহেরপুরে চলতি বছরের শীত মৌসুমে সব ধরণের সবজির ব্যাপক ফলন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ এর তথ্য অনুযায়ী এ বছর মধ্য অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পাতাকপি, ফুলকপি, ওল (বিট) কপি, মূলা, বেগুন, টমেটো, পালংশাক, শিম ইত্যাদি।
কৃষি নির্ভর মেহেরপুরে এবার স্থানীয় বাজারগুলোয় চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত সরবরাহ থাকায় কমে গেছে শীতকালীন শাক-সবজির দাম। ফলে উৎপাদিত সবজির দাম কম পাওয়ায় হতাশ এ অঞ্চলের চাষিরা। ভালো দামে বিক্রি করতে না পেরে হতাশ বিক্রেতারাও।
গতকাল শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাতা কপি বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ টাকা কেজি দরে এবং বিঘা প্রতি ৬-৭ হাজার টাকায়। ফুলকপির অবস্থা আরও খারাপ, বিক্রি হচ্ছে বিঘা প্রতি ৪-৫ হাজার টাকায়। ওল (বিট) কপি বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ টাকা কেজি দরে এবং বিঘা প্রতি ৭-৮ হাজার টাকায়। মূলা বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ৮-১০ টাকা কেজি, শিম বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা কেজি দরে। মাস খানেক আগেও এর চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে এসব সবজি।
বর্তমানে প্রতিদিন মেহেরপুর থেকে অন্তত ১৮ থেকে ২০ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হচ্ছে। জমি থেকেও সবজি ট্রাক ভরে নিয়ে যাচ্ছে ফড়িয়া সবজি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দাম না পাওয়ায় এ বছর লোকসানের মুখে পড়েছে চাষিরা। চাষিদের অভিযোগ, দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সবজি ফলিয়ে খরচের অর্ধেক টাকাও তুলতে পারছেন না তাঁরা।
সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামের রিপন আলী জানান, ৬ বিঘা জমিতে পাতাকপি, ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও ১ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছিলা। প্রতিটি সবজিতে লোকসান হচ্ছে। ৬ বিঘা পাতা কপিতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, দাম পেয়েছি মাত্র ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও ২ বিঘার ফুলকপি ব্যবসায়ীরা কিনতেই চাচ্ছে না। ১ বিঘা শিমে বান ও অনান্যসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ। কিন্তু পাইকারি দাম পাচ্ছি মাত্র ৮ কেজি, তাও অধিকাংশ বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামের সবজি চাষি আমির হোসেন জানান, তিনি এ বছর ২৪ শতক জমিতে লাউয়ের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু বন্যার পানিতে সেটা ডুবে গিয়েছিল। তারপর অন্যের জমি লিজ নিয়ে শিম, ওল কপি ও বেগুন চাষ করেছি। কিন্তু সেটাতেও দাম পাচ্ছি না। এখন জমি লিজ খরচ দেওয়ায় মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে।
কাঁচা বাজারের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান জানান, তিনি প্রায় ১০০ চাষির মাঝে সবজি চাষে পুঁজি খাটিয়েছেন। তারা সবজি বিক্রি করেই টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু সবজির দাম না থাকায় এবার টাকা দাবি করতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, এবার বাম্পার ফলনেও চাষিরা উৎপাদন খরচ ফিরে পাচ্ছে না।
এছাড়াও মোসারেফ হোসেন নামের এক ফড়িয়া জানান, বেশি দামে চাষিদের কাছ থেকে সবজি কিনে রেখেছি। এখন বিক্রি করতে গিয়ে দাম পাচ্ছি না।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মেহেরপুরে শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে।
তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। মেহেরপুর ১ আসনের এমপি ফরহাদ হোসেন এমপি সাহেব আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অল্প সময়ের মধ্যেই মেহেরপুর একটি সবজি সংরক্ষনাগার তৈরি করা হবে। যদি এটা তৈরি হয়ে যায় তাহলে কৃষকরা বেশ উপকৃত হবে।