হঠাৎ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। প্রায় ৮০ হাজার কোটি থেকে কমে বর্তমানে তা ৬২ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে প্রচুর ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ কারণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করছে সরকার। সে কারণে সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকেই কমতে শুরু করে। ৩১ মে ব্যাংক ঋণ কমে ৬৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এরপর ১১ জুন তা ৬২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকায় নেমে আসে।
সূত্র জানায়, গত দেড় মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, এআইআইবিসহ আরও কয়েকটি সংস্থার ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হয়েছে। বুধবারও চীনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) ২৫ কোটি ডলার ঋণ যোগ হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই বিশ্বব্যাংকের একটি ঋণের ২৫ কোটি ডলার যোগ হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি বলেন, করোনায় সবকিছু প্রায় স্থবির হয়ে পড়ায় রাজস্ব আদায় আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। তাই ধারণা করা হচ্ছিল, এবার অর্থবছর শেষে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সে কারণে সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি করা হয়। কিন্তু বিপদের এই দিনে প্রচুর বিদেশি ঋণ পাওয়ায় এখন আর ব্যাংক থেকে সরকারকে ঋণ নিতে হবে না। উল্টো শোধ করে অভ্যন্তরীণ ঋণের বোঝা কমাতে পারবে। ইতিমধ্যে সেই কাজটি শুরুও করে দিয়েছে সরকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, করোনা মোকাবেলায় ৩ জুন আইএমএফের ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের জরুরি সহায়তা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এর আগে ১৫ মে এডিবির ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা রিজার্ভে যোগ হয়। ২০ মে যোগ হয় আরও ২৫ কোটি ডলার। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক-আইএসডিবি এবং এআইআইবি- এই তিন সংস্থার প্রায় ৬০ কোটি ডলার ঋণ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এতেই ২৪ জুন রিজার্ভ বেড়ে ৩৫ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড উচ্চতায় ঠেকেছে, যা আগে কখনও দেশে ঘটেনি।
আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের সংকট শুরু হওয়ায় ঋণনির্ভরতা আরও বেড়ে যায়। মূল বাজেটে ব্যাংক ?ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় বাজেট ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করেছেন। সূত্র-যুগান্তর