অনলাইনে কোনো পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করলে শহর এলাকায় সর্বোচ্চ ৫ দিন ও গ্রামে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য ডেলিভারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং ক্রেতাকে টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে। এসব শর্তের কথা উল্লেখ করে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল।
মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নীতিমালার এসব শর্ত তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আগ্রাসী নয় প্রতিযোগিতামূলক ডিজিটাল ব্যবসায়ের স্বার্থেই এ নীতিমালা। ই-ক্যাব আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্যে সীমাহীন ডিসকাউন্টের বাণিজ্য মডেল নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব করতে দ্রুততার সঙ্গে এ নির্দেশিকা ২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব কান্তি ঘোষ।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেছেন, গত এক বছরে উত্থাপিত ভোক্তাদের নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোক্তারা সমতার ভিত্তিতে এই এসওপিটি প্রণয়ন করেছে।
অনুমোদিত নির্দেশিকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-
* নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে ডেলিভারির সময় আরও সংক্ষিপ্ত হবে এবং ক্রেতাকে তা ক্রয়াদেশ গ্রহণের সময় সুস্পষ্টভাবে অবহিত করতে হবে।
* ই-কমার্সের মাধ্যমে এমএলএম, জুয়া এবং লটারি ব্যবসা করা যাবে না।
* কী পরিমাণ পণ্য স্টকে রয়েছে বিক্রয় বিজ্ঞপ্তিতে সেটি উল্লেখ করতে হবে এবং পণ্যের স্টক হালনাগাদ করতে হবে। পণ্য বিক্রেতা বা চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে না থাকলে স্পষ্টভাবে ‘স্টকে নেই’ বা ‘Stock out’ কথাটি স্পষ্টভাবে পণ্যের পাশে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে রেডি টু শিপ অবস্থা ব্যতিরেকে কোনো ধরনের পেমেন্ট গ্রহণ করা যাবে না।
* অগ্রিম মূল্য আদায়ের ক্ষেত্রে প্রদর্শিত পণ্য অবশ্যই দেশের ভেতরে ‘রেডি টু শিপ’ পর্যায়ে থাকতে হবে। সম্পূর্ণ মূল্য গ্রহণের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি পারসন বা প্রতিষ্ঠানের হস্তান্তর করার মতো অবস্থায় নেই এমন পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্যমূল্যের ১০ শতাংশের বেশি অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এসক্রো সার্ভিসের মাধ্যমে ১০০% পর্যন্ত অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে।
* সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয়াদেশ গ্রহণের পরবর্তী সর্বোচ্চ ৫ দিন এবং ভিন্ন শহরে বা গ্রামে অবস্থিত হলে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি করতে হবে।
* ক্রেতা কোনো অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলে এবং বিক্রেতা কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে সে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মূল্য পরিশোধের সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পরিশোধিত সম্পূর্ণ অর্থ যে মাধ্যমে ক্রেতা অর্থ পরিশোধ করেছেন সেই একই মাধ্যমে ফেরত দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো চার্জ থাকলে মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে তা বহন করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত না পেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে পারবেন ক্রেতা।
* নির্দেশিকার বিধান প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা মার্কেটপ্লেস এর ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট নিবন্ধন ইত্যাদি বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস নিষিদ্ধকরণসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
* যে কোনো অভিযোগ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করতে হবে।
অনলাইনে কেনাকাটায় ক্রেতারা নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হন। অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- বেশিরভাগই পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত সময়ে পণ্যটি পান না। এমনকি কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও পণ্য পাওয়া যায় না। পণ্য দিতে ব্যর্থ হলে অগ্রিম টাকা ফেরত দিতে কয়েক মাস সময় নেয়, কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করলেও সমাধান পাওয়া যায় না। ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায় এ বিষয়গুলোর স্পষ্ট নিয়মের আওতায় আনা হয়েছে।
নতুন এ নীতিমালা অমান্য করলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির বিধান এবং ক্রেতা কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও উল্লেখ রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো খেয়াল-খুশিমতো আর পরিচালনা করতে পারবে না। ফলে ক্রেতাদের ভোগান্তির লাগব হবে।