প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সামরিক অভিধান’ থেকে ‘মার্শাল ল’ শব্দটি বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটা দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
এছাড়া পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা দায়িত্ব পায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার আর্মড ফোর্সেস সিলেকশন বোর্ড মিটিং ২০২০-এ তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মার্শাল ল’ রক্তপাত ছাড়া দেশ ও সশস্ত্র বাহিনীর কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। তাই ‘সামরিক অভিধান’ থেকে আমাদের ‘মার্শাল ল’ শব্দটি বাদ দেয়া উচিত।
জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলের ১৯টি ক্যুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময়ে বহু সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিককে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে সশস্ত্র বাহিনীর এত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা ও সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে যে যুদ্ধেও এত বিপুলসংখ্যক সৈন্য নিহত হয়নি। আমরা (সশস্ত্র বাহিনীতে) আর কোনো ছেলেহারা পিতা বা পিতাহারা ছেলের কান্না শুনতে চাই না।’
প্রধানমন্ত্রী এদিন সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর একের পর এক ক্যুর কারণে সশস্ত্র বাহিনী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এসব ক্যুর নামে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সশস্ত্র বাহিনীর অনেক সদস্যকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘সেনা ও বিমানবাহিনীতে সবচেয়ে বেশি রক্তপাত হয় এবং আমাদের বহু স্বামীহারা বিধবা ও পুত্রহারা মা-বাবার কান্না শুনতে হয়েছে।’ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও একে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা তার সরকারের লক্ষ্য বলে প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আমাদের পরিবারের সম্মানিত সদস্য। তারা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এই বাহিনীকে আরও আধুনিক ও সময়োপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তার সরকার দেশের সুরক্ষা এবং কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে আরও সুসজ্জিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবার মধ্যে যাতে আস্থা বৃদ্ধি পায়, সেজন্য ন্যায্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দিন। আমি জানি, পোস্ট সীমিত বলে বহু লোক এর জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তবু সবাইকে পদোন্নতি দেয়া সম্ভব হবে না। তা সত্ত্বেও যারা পদোন্নতির জন্য সত্যিকারের যোগ্য তাদেরই পদোন্নতি নিশ্চিত করা উচিত।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস ও দেশপ্রেমের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়নে বিশ্বাসীদের দায়িত্ব প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন, যাতে তারা আগামী দিনে দেশকে সঠিক দিকে নিয়ে যেতে পারে।
দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবাইকে কম প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে শুধু অতি জরুরি ব্যয় করতে অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, আমরা করোনাকালে শুধুমাত্র অতি প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করব এবং কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে কোনো খরচ করব না। আর এভাবেই আমরা আবার সুদিন ফিরিয়ে আনব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ফলে রেমিটেন্স হ্রাস পাবে বলে অনেক মহলের আশঙ্কা সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৯.৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার এ লক্ষ্যে প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করার কারণে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ রেমিটেন্স রয়েছে।
এ সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জে. মাহফুজুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
চিফ অব নেভাল স্টাফ অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল নৌবাহিনীর সদর দফতর থেকে এবং চিফ অব এয়ার স্টাফ এয়ার চিফ মার্শাল মসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত বিমানবাহিনীর সদর দফতর থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।