ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জালে গোলের হালি পূর্ণ করে প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নিল লিভারপুল। ম্যানসিটির চেয়ে দুই পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে গেল দলটি। এদিন গোল করে এক মাস ও ৬ ম্যাচ পরে গোল খরা কাটালেন লিভারপুলের মোহামেদ সালাহ। এদিন জোড়া গোলের দেখা পেয়েছেন লিভারপুলের এ মিসরীয় তারকা।
প্রিমিয়ার লিগে দুদলের সবশেষ ম্যাচটা ইউনাইটেড নিশ্চয়ই ভুলেই যেতে চাইবে। সে ম্যাচে সালাহ করেছিলেন হ্যাটট্রিক, রেড ডেভিলরা ডুবেছিল নিজেদের মাঠে ৫-০ গোলে হারের বিষাদে। অ্যানফিল্ডে আজ স্কোরলাইনটা সেদিনের চেয়ে একটু ‘ভদ্রস্থ’ দেখাচ্ছে বটে, তবে তাতে ইউনাইটেডের দুঃখ কম হবে না একটুও।
প্রিমিয়ার লিগের দুই লেগের লড়াই মিলিয়ে এর চেয়ে বড় সামগ্রিক ফল যে রেড ডার্বিই দেখেনি আর কখনও!
তবে ইউনাইটেডকে আগেই শোকের চাদরে মুড়িয়ে দিয়েছিল রোনাল্ডোর সন্তান হারানোর দুঃসংবাদটা। যে কারণে রোনাল্ডোকে আজকের ম্যাচে পানওনি কোচ র্যালফ র্যাংনিক। পর্তুগিজ মহাতারকাকে না পেয়ে জার্মান কোচ দলকে নামিয়েছিলেন ৩-৪-২-১ ছকে, রোনাল্ডোর না থাকার ফলে সৃষ্ট শূন্যতা তিনি ঢাকতে চেয়েছিলেন আগের দিনই দুর্ঘটনার কবলে পড়া ব্রুনো ফার্নান্দেজকে আরেকটু বেশি আক্রমণের দায়িত্ব দিয়ে। তবে সে দায়িত্বে যে তিনি ডাহা ফেল, তা স্কোরলাইন দেখেই আঁচ করা যায় খানিকটা। প্রমাণ মিলছে পরিসংখ্যানেও, প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারকে পরীক্ষায় কেবল একবারই ফেলতে পেরেছিল ইউনাইটেড।
ওদিকে লিভারপুল শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলেছে। ৫ মিনিটে সাদিও মানের পাস থেকে ডান পাশে বিশাল ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে যান সালাহ। সেখান থেকে নিচু ক্রসে লুইস ডিয়াজ করেন গোল, মহারণে শুরুতেই এগিয়ে যায় লিভারপুল। এর আগে অবশ্য ইউনাইটেড কিছুটা তীব্রতা নিয়ে ম্যাচে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিল, তবে সেই গোলটা যেন সেসব ইঙ্গিত মার্সি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার জোগাড়যন্ত্র সেরে দিয়েছিল।
সেই যে লিভারপুল ম্যাচে আধিপত্য দেখানো শুরু করল, তা চলল ম্যাচের শেষতক। ২২ মিনিটে সালাহ পেলেন তার প্রথম গোলের দেখা৷ বক্সে অনেকটা স্কুপ করার মতো করে সালাহকে পাস দিয়েছিলেন মানে, দারুণ এক ফার্স্ট টাচে আয়ত্তে নিতে বলটা জালে পাঠালেন লিভারপুলের প্রাণভোমরা। বিরতির আগে আর গোলের দেখা পায়নি লিভারপুল। তাতে অবশ্য ইউনাইটেডের বড় হারের শঙ্কা উবে যায়নি। শুরুর ৪৫ মিনিটে যেভাবে ছড়ি ঘুরিয়েছে লিভারপুল, তাতে আরেকটা ৫-০ কে মনে হচ্ছিল সময়েরই ব্যাপার মাত্র।
৬৬ মিনিটে মানের গোলে ইউনাইটেডের সে শঙ্কাটা আরও বাড়ে বৈকি। ৮৫ মিনিটে সালাহ বল পেলেন বক্সের একটু আগে, বক্সে থাকা অ্যারন ওয়ান বিসাকাকে বোকা বানিয়ে করেন চতুর্থ গোলটা। যোগ করা সময়ে একটা সুযোগ নষ্ট করেন সালাহ, না হয় হ্যাটট্রিকটাও হয়ে যেত তার। তাতে কেবল স্কোরলাইনটাই আর বড় হয়নি, তবে তাই দলের লিগ জেতার আশা টিকিয়ে রাখার জন্য ছিল যথেষ্ট।
এই জয়ের পর ৩২ ম্যাচে ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে সাময়িকভাবে লিগের শীর্ষেও চলে এসেছে দলটি। যদিও এক ম্যাচ কম খেলে সিটি নিজেদের পরের ম্যাচ জিতলে ক্লপের দল চলে যাবে দ্বিতীয় স্থানে।
ওদিকে ইউনাইটেড নেমে গেছে ছয়ে। ৩৩ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট দলটির। এই অবস্থানে লিগ শেষ করলে ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়নস লিগ তো বটেই, ইউরোপা লিগও খেলা হবে না দলটির। নতুন কোচ এরিক টেন হ্যাগ আসার আগে যে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চাইবেন র্যাংনিক, তা বলাই বাহুল্য।