জাসদের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফসহ ৫ জনকে হত্যা মামলার ফাঁসির আসামি রওশন আলীকে মেহেরপুর কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
সোমবার বেলা ১১ টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রওশনকে মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাসের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে মেহেরপুর কারাগারে নেয়ার নির্দেশ দেন। পরে কড়া পুলিশি প্রহরায় তাকে কারাগারে নেওয়া হয়।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রওশন আলী মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল বাকী হত্যা, ভবানীপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন মাস্টার এবং আলম হুজুর হত্যা মামলারও আসামি। রওশন আলী গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের নাইয়েদ আলীর ছেলে।
জানা গেছে, ২২ বছর আত্মগোপনে থাকার পর কয়েকদিন আগে রাজশাহী থেকে র্যাবের হাতে আটক হন রওশন। আত্মগোপনে থেকে রওশন নাম পাল্টে উদয় মন্ডল নামে সে ২২ বছর ধরে রাজশাহী এলাকার একটি গ্রামে বসবসা করে আসছিলেন। এবং জাতীয় পরিচয় পত্রে তিনি উদয় মন্ডল নাম ব্যবহার করে আসছিলেন।
জানা গেছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর, পীরতলা, কাজীপুর, আড়পাড়া, শানঘাট, চান্দামারী এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ত্রাস ছিলেন রওশন আলী। ১৯৯৯ সালের ১৩ এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে আব্দুল বাকী চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাকীর ভাই সাজ্জাদুল স্বপন বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি হিসাবে রওশন আলীকে ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক টি এম মুসা রওশনকে ফাঁসির আদেশ দেন।
বাকী হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস পর প্রকাশ্য দিবালোকে ভবানীপুর-পীরতলা মাঠের সড়কে গুলি করে আমাজদ মাস্টারকে হত্যা করে রওশন গ্রুপ। হত্যা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এর আগে আমজাদ মাস্টার ও আব্দুল বাকীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ভবানীপুর গ্রামের আলম হুজুরকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছিল রওশন ও তার বাহিনীর সদস্যরা।
১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি সভা চলছিল। সভার সময় ব্রাশ ফায়ারে জাসদের পাঁচজন নেতা নিহত হন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদ ছাড়াও নিহত হন তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন এবং শমসের মণ্ডল। ওই মামলায় ২০০৪ সালের ৩০ অগাস্ট রওশন আলীসহ ১০ জনের ফাঁসি এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন কুষ্টিয়া জেলা জজ।
২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারী রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হয় ৩ আসামীর। এরা হলেন-কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রাজনগর গ্রামের হাবিবুর রহমান, কুর্শা গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও রাশেদুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে কারাগারে একজনের মৃত্যু হয় আর বাকীরা পলাতক রয়েছে। এর মধ্যে রওশন আলী আটকের মধ্য দিয়ে আরও একজন আটক হলো।