সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে আগুন লেগে বনের গুল্ম জাতীয় গাছপালা পুড়ে গেছে। ধানসাগর ফরেস্ট স্টেশনের শেষ সীমানায় গতকাল সোমবার বেলা ২টার দিকে আগুন লাগার এ ঘটনা ঘটে। বনকর্মী, সহ-ব্যবস্থাপনা টিমের সদস্য ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন পুরোপুরি নিভে না গেলেও আর ছড়াবে না বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আশ্বস্ত করেছেন। আগুনে সেখানকার ৩ দশমিক ৯৮ শতক এলাকার ঘাস, লতাপাতা, গুল্ম পুড়ে গেছে। খুলনা অঞ্চলের বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে ধানসাগর টহল ফাঁড়ির কর্মী, সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম (সিপিসি)-এর সদস্যরা দ্রুত সেখানে যান এবং ফায়ার লাইন কাটার মাধ্যমে আগুন বনের ভেতরে ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করেন। একইসঙ্গে ফায়ার কর্মীরা সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করেন।
প্রধান বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান আরও বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে তিনি নিজে এবং সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন ঘটনাস্থলে যান। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
আগুনে তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে তিনি দাবি করেছেন। তবে, আগুন লাগার কারণ কী এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত তা অনুসন্ধানে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা (এসিএফ) এনামুল হককে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এ কমিটিকে ৭ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় শরণখোলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, বেলা দুইটার দিকে সিপিজে সদস্য সোলায়মান হোসেন বনের মধ্যে ধোঁয়ার কন্ডলী দেখে আমাকে ফোন করেন। পরে আমি সিপিজি সদস্য, স্থানীয় লোক ও বনরক্ষীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে স্থানীয়ভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই। তারা এসে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে ততক্ষণে ধানসাগর স্টেশনের টহল ফাঁড়ির এক কিলোমিটার ভিতরে প্রায় ৪ শতক বনভূমি পুড়ে গেছে। তবে বড় ধরনের কোনও গাছ পোড়েনি।
আগুন লাগার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, বিড়ি সিগারেটের অব্যবহৃত অংশ থেকে আগুন লাগতে পারে। আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে অল্প বয়সী কয়েকটি ছেলে বনের মধ্য থেকে বের হয়েছে এমন তথ্য পেয়েছি স্থানীয়দের কাছ থেকে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
শরণখোলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা এস এম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বন বিভাগের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হয়নি। বনের গাছের পাতা পড়ে মাটিতে প্রায় দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু পাতার স্তর তৈরি হয়েছে। যার ফলে মাঝে মাঝে আগুন জ্বলে উঠছে। ঝুটের কারখানায় আগুন লাগলে যা হয় তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে স্টেশন কর্মকর্তা এসএম আব্দুল ওয়াদুদ আরও বলেন, দুপুরের দিকে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলেমেয়ে বনের মধ্যে প্রবেশ করেছিল বলে শুনেছি। ধারণা করছি, তাদের ফেলা সিগারেটের অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে। এখন আর কোনও সমস্যা নেই। ওই এলাকায় এখন বনরক্ষীদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।