বর্তমান সময়ে ওয়ানপ্লাস নর্ড-টুসহ বিস্ফোরণের অন্যান্য ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের। গ্রাহকদের মনে নানা প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কেন একটি স্মার্টফোন বিস্ফোরিত হয়? কী করলে স্মার্টফোনের বিস্ফোরণ এড়ানো সম্ভব? যুগান্তরের আজকের আয়োজনে স্মার্টফোনের বিস্ফোরণ এড়াতে করণীয় নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন- তানভীর তানিম
স্মার্টফোন যতই স্মার্ট হোক না কেন বা সেগুলো যতই প্রিমিয়াম হোক, ইলেকট্রনিক এসব ডিভাইস ব্যাটারি বিস্ফোরণের জন্য সংবেদনশীল। স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি নোট সেভেন ব্যর্থতার কথা আমাদের সবারই কম-বেশি জানা। বিস্ফোরণের ৩৫টিরও বেশি ঘটনা ঘটার পর প্রতিষ্ঠানটি সে সময় তাদের লাখ লাখ ইউনিট বাজার থেকে তুলে নিতে বাধ্য হয়। এমন ঘটনা যে পুনরাবৃত্তি ঘটছে না সেটি কিন্তু একদমই নয়। প্রায়ই ব্যবহারকারী, নির্মাতা নির্বিশেষে সবার কাছ থেকে স্মার্টফোনে আগুন বা বিস্ফোরণের ঘটনা শোনা যায়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তা মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
যে কারণে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে
* উৎপাদন ত্রুটি : ফোন বিস্ফোরিত হওয়ার প্রধান কারণ হলো উৎপাদন ত্রুটি। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি যা হ্যান্ডসেটকে শক্তি জোগায়। তা বাজারজাতকরণের আগে সঠিকভাবে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। একটি ভুল উপাদান বা অ্যাসেম্বলি লাইনের ত্রুটির ফলে ব্যাটারি ত্রুটিযুক্ত হতে পারে। ব্যাটারির ভেতরের কোষগুলো এরকম নানা কারণে মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রায় পৌঁছায় (বাহ্যিক তাপ, অতিরিক্ত চার্জিং বা দুর্বল উৎপাদনের কারণে)। সস্তা ব্যাটারিতে শর্টসার্কিট হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
থার্ড পার্টি চার্জারের ব্যবহার : অধিকাংশ মানুষ যে সাধারণ ভুলটি করে থাকে তা হলো, নিজস্ব চার্জার ছাড়া অন্য ফোনের চার্জার দিয়ে চার্জ করা। দেখতে একই রকম হলেও থার্ড-পার্টি চার্জারে হ্যান্ডসেটের জন্য প্রয়োজনীয় ফিচার থাকে না।
রাত্রিকালীন চার্জিং : ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হওয়ার প্রধান কারণ রাত্রিকালীন চার্জিং। ঘুমাতে যাওয়ার সময় ফোন চার্জিংয়ে রাখার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এটি ব্যাটারির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত চার্জ মাত্রাতিরিক্ত গরম, শর্টসার্কিট এবং বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে। বর্তমানে অনেক স্মার্টফোনে এমন একটি চিপ থাকে, যা ব্যাটারির স্তর ১০০ শতাংশ হলে বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। বাজারে এখনো সাশ্রয়ী মূল্যের কিছু হ্যান্ডসেট রয়েছে যাতে এ ফিচারটি নেই।
প্রসেসরের মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা : স্বাভাবিকভাবেই প্রসেসর ফোনকে গরম করতে ভূমিকা রাখে। চিপসেট এমনকি সবচেয়ে শক্তিশালী, মাল্টি-টাস্কিং এবং পাবজির মতো ভারি গ্রাফিক্সের অ্যাপ চালানোর তাপজনিত সমস্যা রয়েছে। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ওএম স্মার্টফোনগুলোতে থার্মাল লক বা থার্মাল পেস্ট বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, থার্মাল লক ফেইল হয় এবং ফোনের বিস্ফোরণ ঘটে।
সরাসরি সূর্যালোকে ফোন রাখা : অতিরিক্ত তাপ ফোনের ব্যাটারি নষ্ট করে দিতে পারে। এতে কোষ কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়, এক্সোথার্মিক ভেঙে যায়, যা অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাস উৎপন্ন করে। এসব গ্যাসের কারণে ব্যাটারি ফুলে যায়, এর গঠন বিকৃত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ফোন বিস্ফোরিত হতে পারে।
স্মার্টফোন বিস্ফোরিত হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে এগুলো অন্যতম। যদিও স্মার্টফোনের বিস্ফোরণে সৃষ্ট আগুন খুব অল্প সময় স্থায়ী হয়। তবুও সতর্ক থাকা উচিত।
ফোনের বিস্ফোরণ এড়াতে করণীয়
স্মার্টফোনের ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত এবং এটি বিস্ফোরিত হতে পারে এমনটি বোঝার যেসব সাধারণ সতর্কতামূলক লক্ষণগুলো খেয়াল করুন। ব্যাটারির ফোলাভাব, হিস শব্দ বা পপিং করছে কিনা নজর দিন। এ ছাড়া নিশ্চিত করুন যে আপনি ফোনের নিজস্ব চার্জার ব্যবহার করছেন, অতিরিক্ত চার্জিং করছেন না এবং ফোনকে জল থেকে দূরে রাখছেন (বিশেষ করে যদি এটি জল-প্রতিরোধী না হয়)। প্রচণ্ড গরম হলে ফোন চার্জ করবেন না এবং চার্জ করার সময় বালিশের নিচে বা মাথার কাছে না রেখে অন্য কোথাও রাখুন।