শখের বসে নামকরা ব্র্যান্ডের দামি স্মার্টফোন কিনেছিলেন আনিলা তাবাসসুম। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপ ব্যবহারের পাশাপাশি ইউটিউব এবং ছবি সম্পাদনার কাজেই বেশি মুঠোফোন ব্যবহার করেন তিনি। কিন্তু কেনার কিছুদিন পরই তাঁর মুঠোফোনটির গতি যায় কমে। শুধু তা–ই নয়, অ্যাপ চালু হতে বেশি সময় নেওয়ার পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই মুঠোফোনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আনিলা তাবাসসুমের মতো এ সমস্যা আমাদের অনেকেরই হয়ে থাকে। কিন্তু কেন হয়
এ সমস্যা? কারণ, শখের বসে বা কাজের প্রয়োজনে আমরা মুঠোফোনে যেসব অ্যাপ ইনস্টল করেছি সেগুলোর বেশ কয়েকটি ব্যবহার না করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে থাকে। ফলে আমাদের মুঠোফোনের গতি কমে যায়। মুঠোফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু থাকা অ্যাপগুলো নিচে দেওয়া হলো।
মুঠোফোনে ইনস্টল থাকা অ্যাপ
নতুন কেনা মুঠোফোনে বেশ কিছু অ্যাপ ইনস্টল করে দেয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। আগে থেকে ইনস্টল করা অ্যাপগুলোকে বলা হয় ব্লোটওয়্যার। অ্যাপগুলো আমরা ব্যবহার না করলেও মুঠোফোনে চালু থাকায় অতিরিক্ত মেমোরি খরচ হতে থাকে। যেসব অ্যাপ মুঠোফোনের সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত নয়, সেগুলো মুছে ফেললে মেমোরির ওপর চাপ কমবে। ফলে গতি বাড়বে মুঠোফোনের।
স্ন্যাপচ্যাট
মুঠোফোনের গতি কমানো অ্যাপগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জনপ্রিয় বার্তা বিনিময়ের অ্যাপ স্ন্যাপচ্যাট। আপনি ব্যবহার না করলেও অ্যাপটি সব সময় চালু থাকে এবং আপনার অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। ফলে বেশি মেমোরি ব্যবহারের পাশাপাশি মুঠোফোনের ব্যাটারির ক্ষমতাও কমিয়ে দেয় অ্যাপটি। এ জন্য স্ন্যাপচ্যাটের লাইভ লোকেশন সুবিধা ব্যবহার না করাই ভালো। লাইভ লোকেশন বন্ধ করার জন্য স্ন্যাপচ্যাটের Settings অপশনে প্রবেশ করে Who Can ট্যাব থেকে See My Location-এ Ghost Mode নির্বাচন করতে হবে।
ফেসবুক
মুঠোফোনে আমরা প্রায় সবাই ফেসবুক ব্যবহার করি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপটি আমাদের মুঠোফোনের গতি কমিয়ে দেয়। চালু না থাকলেও অ্যাপটি আপনার সব তথ্য সব সময় সংগ্রহ করতে থাকে। মুঠোফোনে চালু থাকায় মেমোরি ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যাটারির চার্জও দ্রুত কমিয়ে দেয় অ্যাপটি।
মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রাম
ফেসবুকের মতোই সব সময় চালু থাকে মেসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রাম। অর্থাৎ আপনি লগ–ইন না করলেও সেগুলো গোপনে মুঠোফোনে চালু থাকে এবং আপনার তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করে।
ম্যাপস অ্যাপ
পথের ঠিকানা বা রাস্তায় জ্যামের তথ্য জানতে আমরা অনেকেই অ্যাপল ম্যাপস ও গুগল ম্যাপস ব্যবহার করি। অ্যাপগুলো সব সময় আমাদের অবস্থান শনাক্ত করতে থাকে। কারণ, অ্যাপগুলোর প্রধান কাজই হচ্ছে আপনার অবস্থান জেনে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের পথের ঠিকানা জানানো। ফলে মুঠোফোনের মেমোরি ও ব্যাটারি বেশি খরচ হয়।
ইউটিউব ও নেটফ্লিক্স
মুঠোফোনে ইউটিউব ও নেটফ্লিক্স অনেকেই ব্যবহার করেন। ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপগুলো মুঠোফোনের ব্যাটারি সবচেয়ে বেশি খরচ করে। শুধু তা–ই নয়, চালু না করলেও গোপনে সব সময় ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। কারণ, ব্যবহারকারীদের অবস্থান এবং আগ্রহ পর্যালোচনা করেই মূলত ভিডিও দেখার পরামর্শ দিয়ে থাকে অ্যাপগুলো। এ ছাড়া অনলাইনে ভিডিও দেখার সময় দ্রুত গতির ইন্টারনেট প্রয়োজন হওয়ায় মেমোরি বেশি ব্যবহার হয়, ফলে মুঠোফোনের গতি কমে যায়।
ক্লিন মাস্টার
মুঠোফোনে অপ্রয়োজনীয় ফাইল মুছতে অনেকেই ক্লিন মাস্টারসহ বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করেন। তথ্য মুছে দেওয়ার কথা বললেও ক্লিন মাস্টার অ্যাপটি আপনার মুঠোফোন থেকে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে পাচার করতে থাকে। শুধু তা–ই নয়, ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে মুঠোফোনের গতিও কমিয়ে দেয়। আর তাই অপ্রয়োজনীয় ফাইল মোছার জন্য অ্যাপটি ব্যবহার না করাই ভালো।
সমাধান হবে যেভাবে
মুঠোফোনে থাকা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো আন-ইনস্টল করে নিন। আন-ইনস্টল না হলে বা আপনি করতে না চাইলে অবশ্যই মুঠোফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যাপগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রথমে মুঠোফোনের সেটিংস থেকে Connections-এ ক্লিক করে Mobile data usage অপশনে যেতে হবে। এবার অ্যাপ নির্বাচন করে নিচে থাকা Allow background data usage–এর পাশে থাকা টগল বন্ধ করতে হবে।
নিয়মিত ক্যাশ ফাইল মুছে ফেলেও মুঠোফোনের গতি বাড়ানো যায়। এ জন্য মুঠোফোনের সেটিংস থেকে Apps & notifications অপশন নির্বাচন করে all apps–এ ক্লিক করতে হবে। এবার অপ্রয়োজনীয় বা সন্দেহজনক অ্যাপ নির্বাচন করে Storage & cache অপশন থেকে Clear cache–এ ক্লিক করতে হবে।