ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের দুবলোকুড়ির বিলে ফুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন চাষি শিশির। বাহারি রং আর সুগন্ধে ভরপুর ফুলের বাগান। ৪৬ শতক জমিতে রজনিগন্ধা, গোলাপ ফুল,গাঁদাফুল, চন্দ্রমল্লিকা ফুল,চাইনা গোলাপফুলের সুবাশ প্রতিনিয়তই ছড়াচ্ছে।
রজনিগন্ধা, গোলাপ ফুল,গাঁদাফুল, চন্দ্রমল্লিকা ফুল,চাইনা গোলাপের চাষ করে গতো বছরে ৯০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন তিনি। তবে বাজার যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে অনায়াসে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয় করা সম্বব বলে আশা করেন এই চাষি।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ৪ নং দৌলৎপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর (কাদিখালী) গ্রামের এই চাষি শিশির আহম্মেদ জানান,গতো ২০১৮ সালে দুবলোকুড়ির বিলের ধারে ৪৬ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ফুল চাষ করে ছিলেন তিনি। প্রাথমিকভাবে লক্ষাধিক টাকা খরচ হলেও প্রথম বছরেই ৯০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছিলাম। শুরুতেই মহামারী মরণব্যধী করোনা ভাইরাসে প্রায় এক লক্ষ টাকার লোকসান গুনতে হয়। তারপরও থেমে থাকেনি তরুণ এই উদভাবনীর স্বপ্ন। ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখেই ধানের আবাদ বাদ দেন। চলতি মৌসুমে আরও কিছু জমিতে এই চাষ বাড়ানো হবে। সরকারি সহায়তা পেলে আগামিতে এই ফুল চাষ বৃহত্তর পরিসরে করতে চাই। আমি এই ফুল অত্র অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে জেলা শহর সহ অন্যান্য অঞ্চলেও বানিজ্যিক ভাবে পাঠিয়ে থাকি। খুলনা অঞ্চলের রাজারহাট কোয়াদা থেকে চারা এনে ফুল লাগানোর প্রথম বছরেই আমি ফুল বিক্রি করতে পেরেছিলাম।
ফুল চাষি শিশির আরও জানান, বেলে দোআঁশ মাটিতে অল্প পরিচর্যা আর খরচে ফুলের চাষ হচ্ছে। শুকনা মৌসুম হচ্ছে ফুল চাষের একটি ফুল মৌসুম। আমাদের অঞ্চলের মাটি ভালো হওয়ায় তেমন কোনও ক্ষতি হয় না। বর্তমানে প্রতিটি গোলাপ সাধারণত ১০ টাকা,প্রতি একশ গাঁদা ফুল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, প্রতিটি রজনিগন্ধা ৯ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছেন।
জানাগেছে তরুণ এই স্বপ্ন বিলাসী ২০১০ সালে ঝিনাইদহ জেলার শিশুকুঞ্জ স্কুল এণ্ড কলেজ থেকে এস,এস,সি পাশ করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সনে এইচ এস সি, তারপর দেশের দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ঐতিহ্যবাহী লালন শাহ কলেজ থেকে অনার্স রাষ্ট্র বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা জীবন শুরু করলেও খুব বেশীদিন টিকতে পারেন নি। সাংসারিক রোষানল পেছন থেকে টেনে ধরে আটকে গেলো বৈবাহিক জীবনে। আর হলো না শিক্ষা। তাই বলে কি থেমে যাবে স্বপ্ন? না থেমে থেকে নি এই তরুণের চোখ জুড়ানো স্বপ্ন। এখন সে স্বপ্ন দেখে আগামীদিনের পর্যাটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
হরিণাকুণ্ডু সরকারি লালন শাহ কলেজের এক রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স পড়ুয়া ছাত্র রুবেল মিয়া জানান, ঐ এলাকাতে এক বিঘা জমিতে এই ফুল চাষ করা হয়েছে। আমি এর পাশাপাশি দুবলোকুড়ির বিলে ধারে ফুলচাষের নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই দুবলোকুড়ির বিলে ধারের উৎপাদিত ফুল দিয়ে অনেকটা চাহিদা পুরণ করা সম্বব হচ্ছে।
এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান জানান, হরিণাকুণ্ডুতে ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।আমাদের মাটি ও জলবায়ু্ও ফুল চাষের জন্য উপযোগী। দুবলোকুড়ির বিলের ধারে ফুল চাষ হচ্চে শুনেছি। হরিণাকুণ্ডু কৃষি অফিস থেকে এখনো তেমন কোন সহযোগীতা দেয়া হই নাই। গান্না ফুল চাষী সমিতির সাথে দুই দিন কথা বলেছি, তারা বলেছে হরিণাকুণ্ডু থেকে কোন কৃষক ফুল চাষে এগিয়ে আসলে বাজারজাত করার বিষয়ে তারা সর্বাত্মক সহযোগীতা করবেন। সেই সাথে হরিণাকুণ্ডু কৃষি অফিস কৃষকের মার্কেট লিংকেজ তৈরী করা সহ বিশেষ করে চাষের সময় যে কোন রকমের সহযোগীতা করতে কৃষকের পাশে থাকবে। তিনি আরো বলেন, এই মহূর্তে আমাদের কোন প্রকল্প নেই ফুল চাষের বিষয়ে ।
তবে বেশ কিছু কৃষক আগ্রহী থাকলে ভবিষ্যতে আমরা প্রস্তাব পাঠাবো, যেন হরিণাুকণ্ডুতেও ফুল চাষে সরকারী যে সকল সহযোগীতা করা হয়, সেগুলো যেন এখানের পাওয়া যায় সেবিষয়ে আমরা রিপোর্ট পাঠাবো এবং আশা করি কৃষক আগ্রহী থাকলে আগামী বছর আমরা সরকারী কোন সহযোগীতা পেতে পারি