বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর বিভিন্ন ব্যবহারিক জিনিসপত্রের ভিড়ে বিলুপ্ত হচ্ছে আলমডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। সেই সাথে প্রায় হারিয়ে গেছে মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজানো গ্রামীন সংস্কৃতির নানা উপকরণ ও গৃহস্থালী নানান প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা পৌরসভা সহ ১৫টি ইউনিয়নে মৃৎশিল্প তৈরীকারক পরিবারগুলোর মধ্যে চলছে অভাব–অনটন। কারণ তাদের তৈরি পণ্য আগের মত বাজারে চলছেনা বলে বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার জীবনের আসল চিত্র। গ্রামে এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে মৃৎশিল্প প্রস্তুতকারী পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে মেলায় অংশ গ্রহণের জন্য তৈরী করছে ছোট ছোট পুতুল ও মাটির খেলনা।
পূর্বে মৃৎ শিল্পের খ্যাতি ছিল কিন্তু আজকাল অ্যালুমিনিয়াম, চীনা মাটি, মেলা–মাইন এবং বিশেষ করে সিলভারে রান্নার হাড়ি কড়াই প্রচুর উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। কথিত আছে মৃৎশিল্প প্রায় দুই থেকে আড়াই শত বছর পূর্ব থেকে চলে আসছে। জানা যায় অতীতে এমন দিন ছিল যখন গ্রামের মানুষ এই মাটির হাঁড়ি কড়া, সরা,বাসন, মালসা, ঘরের লালি, কুয়ার চাক ইত্যাদি দৈনন্দিন ব্যবহারের সমস্ত উপকরণ মাটির ব্যবহার করত কিন্তু আজ বদলে যাওয়া পৃথিবীতে প্রায় সবই নতুন রূপ। নতুন সাজে আবার নতুন ভাবে মানুষের কাছে ফিরে এসেছে।
এখন মানুষের রুচি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিত্য নতুন রূপ দিয়ে মৃৎ শিল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করছে।এক সময়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রতিটা গ্রামেও ছিল মাটির তৈরি পণ্য সামগ্রীর সমাহার। বিভিন্ন বাজারে ছিল মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল সহ অন্যান্য সামগ্রীর দোকান ।
কিন্তু এখন আর কুমারদের কর্তৃত্ব নেই এখানে।
আলমডাঙ্গা বাজারে নির্দিষ্ট দোকান না থাকলেও বিভিন্ন দোকানে দৃষ্টি নন্দন মাটির সামগ্রী কলসি, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, মটকা, দৈ পাতিল, মুচি ঘট, মুচি বাতি, মিষ্টির পাতিল, রসের হাঁড়ি, ফুলের টব, চাড়ার টব, জলকান্দা, মাটির ব্যাংক, ঘটি, খোঁড়া, বাটি, জালের চাকা, প্রতিমা,বাসন–কোসন, ব্যবহারিক জিনিসপত্র ও খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি পাওয়া যায়। তারাও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করে কোনরকম নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।
আলমডাঙ্গা বাজারের মৃৎশিল্প পণ্যের দোকানের বিক্রেতা বয়োবৃদ্ধ বিজয় পাল জানান, প্রায় ৩০ বছরেরও বেশী সময় ধরে তার এই ব্যবসা করে আসছি। এখন আর মাটি সামগ্রীর কদর নেই। অভাব অনটনে যাচ্ছে দিন।
-খন্দকার শাহ আলম মন্টু, আলমডাঙ্গা