হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মরহুম আমির আল্লামা আহমদ শফী ও বর্তমান আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীদের দ্বন্দ্ব এখন চরমে। আল্লামা শফীকে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামের একটি আদালতে বাবুনগরী অনুসারী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর প্রকাশ্যে নেমেছেন দুই নেতার অনুসারীরা। তারা একে অপরকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে কওমি অঙ্গনেও। ফলে পুরো দেশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে কওমি মতাদর্শীরা।
হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘হত্যার অভিযোগে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। আল্লামা শফীর মৃত্যুর আগে হাটহাজারী মাদরাসায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এ মামলা নিয়ে আমরা বিচলিত নই। আইনিভাবে তা মোকাবিলা করা হবে। ষড়ন্ত্রকারীদেরও প্রতিহত করা হবে।’
আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আল্লামা শফীকে হত্যা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত হুজুরের লাখো ভক্ত অনুসারী এবং ছাত্ররা মাঠে থাকবে। এ হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়ব না।’
জানা যায়, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর থেকে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে- এমন দাবি করে আসছে পরিবার ও তার অনুসারীরা। ঢাকা-চট্টগ্রামে একাধিক সংবাদ সম্মেলনও করা হয়। প্রতিবাদে পাল্টা বিবৃতিও দিয়েছেন বাবুনগরীর অনুসারীরা। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মাঠে নামে দুই গ্রুপ। এর জেরে সম্প্রতি ঘোষিত হেফাজতে ইসলামের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয় প্রভাবশালী কয়েক নেতাকে। যার মধ্যে আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীও রয়েছেন।
ওই কমিটি গঠনের পর পর পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণাও দেয় বঞ্চিতপক্ষ। তারা দেশের শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। সবশেষ গত বুধবার চট্টগ্রামে একটি আলোচনা সভায় আল্লামা আহমদ শফীকে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ করেন তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা। এরপর শফীর শ্যালক বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ১১ সেপ্টেম্বর বিকালে ফটিকছড়ি থানাধীন বাবুনগর এলাকায় মামুনুল হকসহ কয়েকজন আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৬ সেপ্টেম্বর আসামি ও তাদের সহযোগীরা হাটহাজারী মাদরাসায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি গ্রুপ মাদরাসার বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করে।
১৭ সেপ্টেম্বর আসামিরা আল্লামা আহমদ শফীর কক্ষ ভাঙচুর করে আল্লামা শফীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে এবং অক্সিজেন খুলে নেয়। তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স প্রায় এক ঘণ্টা আটকিয়ে রাখা হয়। আসামিরা পরিকল্পিতভাবে আল্লামা শফীকে খুন করে।’