বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া কিছু পোশাক ‘স্বাস্থ্যঝুঁকির’ অজুহাতে প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো দায় নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ সব সময় বায়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী পোশাক বানায়। কিন্তু বর্তমানে যে মানদণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ ওঠেছে সেগুলা বায়ারের সকল নির্দেশনা মেনেই করা হয়েছে। তৈরি করা পোশাক তৃতীয় পক্ষের ইন্সপেকশন আর ল্যাব টেস্ট পাশ করার পরেই রপ্তানি করা হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটার কোনো সুযোগ নেই।
অথচ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া কিছু পোশাক ‘স্বাস্থ্যঝুঁকির’ অজুহাতে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক নীতি সহায়তা প্রদান করা সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি)। বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া পোশাক জনস্বার্থে বাজার থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে।
চলতি ২০২৩ সালে ১২টি দেশের বাজার থেকে বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া পোশাক উঠিয়ে নিতে বাধ্য করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। এর কারণ হিসেবে একেক দেশে একেক ধরনের অজুহাত তুলে ধরা হয়েছে। আবার অনেক দেশে বিক্রি হওয়া পোশাক গ্রাহকদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওইসিডির তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে- পোশাক পরার কারণে চাপে শ্বাসরোধ হবার শংকা; বাচ্চাদের পাজামায় মেটাল বাতন বা জিপারের কারনে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা; ঢিলেঢালা হওয়ার কারণে আগুনের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি; পোশাকে অতিমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ থাকা, আগুন প্রতিরোধী মান নিশ্চিত না হওয়া প্রভৃতি।
ঘটনাগুলো কোনটাই বাংলাদেশে তৈরি পোশাক বলে হচ্ছে এমন নয়। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে- জর্জ, টার্টলডোব লন্ডন, স্পোর্টল্যান্ড, টার্গেট অস্ট্রেলিয়া, বাচ্চাদের পোশাক বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান কিকি অ্যান্ড কোকো, মাগলিয়া ব্যামবিনো, রেট্রো জিনস, ব্রোকার্স অ্যাথলেটিক, যুক্তরাষ্ট্রের সেলফি ক্র্যাফ্ট কোম্পানি এবং সাইপ্রাসের একটি কোম্পানি। এরা নিজেরাই পোশাক এর বিবরণ তৈরি করতে গিয়ে ওইসিডি’র মানদণ্ড অনুসরণ না করায় এই পোশাক প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ জানান, বাংলাদেশ সব সময় বায়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী পোশাক বানায়। কিন্তু অভিযোগ বা মান্দন্ডগুলো সবই উক্ত পোশাকের ডিজাইন যারা করেছে, বা বিবরণ যারা ঠিক করেছে তাদের বিষয়। বাংলাদেশে বায়ারের সকল নির্দেশনা মেনে, বেধে দেওয়া মানদণ্ড মেনে পোশাক তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা পোশাক তৃতীয় পক্ষের ইন্সপেকশন আর ল্যাব টেস্ট পাশ করার পরেই রপ্তানি করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পণ্যের চাহিদামাফিক মান রক্ষা করেই রপ্তানি করা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রকসংস্থা ওইসিডির তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া পোশাক জনস্বার্থে বাজার থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। ২০২২ সালে এই রকম ঘটনা ঘটেছে চারবার এবং ২০২১ সালে পাঁচবার। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১২টি ঘটনা ঘটেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া নানা ব্র্যান্ডের পোশাক তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এমন ভুল সংবাদের জন্য সেই পত্রিকার কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া হবে। বিএনপি শুধু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেই ক্ষান্ত নয়, তারা গুজবও রাটাচ্ছে। যারা বিদেশে বসে এসব গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের সেই দেশেই আইনের আওতায় আনা হবে। সেইসব দেশে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করছে সরকার। একইসঙ্গে সেই দেশের বাঙালি কমিউনিটিও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’