মেহেরপুরের মুজিবনগরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে ২২শ টাকা সম্মানী পাওয়ার জন্য ঘুষ দিতে হয়েছে ৫শ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
এসকল অভিযোগ উঠেছে, বাগোয়ান ইউনিয়ন কমান্ডার আবুল কাশেম, দারিয়াপুর ইউনিয়ন কমান্ডার আতিকুর রহমান, মহাজনপুর ইউনিয়ন কমান্ডার সেফাউল হক ও উপজেলা কোম্পানি কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে।
গতকাল রবিবার দুপুরে মুজিবনগর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে এ নিয়ে বিক্ষোভ করেন আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা। তারা জানান, ৬ শত জন সদস্যর প্রত্যেককে ২১শ ৮৫ টাকা করে দেওয়া হয়। নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করার জন্য দিনপ্রতি ৪৭৫ টাকা আসা-যাওয়া বাবদ ১০০ ও ২৫০ টাকা খাওয়া বাবদ বরাদ্দ থাকলেও সেই টাকা তাদের দেওয়া হয়নি। দায়িত্ব পালনকালে নিজেরাই নিজ খরচে খাবার খেয়েছেন বলে জানান আনসার ভিডিপি সদস্যরা। পরিস্থিতি দেখে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন সরকার ও জেলা কামান্ড্যান্ট শাহাদাত হোসেন ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থতি শান্ত করেন।
আনসার সদস্যদের দাবি, নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পেতে ইউনিয়ন কমান্ডারদের খুশি করতে হয়েছে। কারও সাথে ১ হাজার আবার কারও সাথে ৫শ টাকা ঘুষ নিয়েছে ইউনিয়ন কমান্ডাররা। বিনিময়ে আনাসার ভিডিপি সদস্যদের বলা হয়েছে নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন শেষে প্রত্যেককে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫ শত টাকা করে দেওয়া হবে।
বাগোয়ান ইউনিয়নের আনসার সদস্যদের মধ্যে চন্দনসহ অন্যান্য সদস্যরা জানান, আমাদের ইউনিয়ন কমাণ্ডার আবুল কাশেম নির্বাচনী ডিউটি করানোর জন্য আমাদের কাছ থেকে ৫শত টাকা নিয়েছে।
এরকম ভাবে একই অভিযোগ তুলে মহাজনপুর ইউনিয়নের আনসার ভিডিপি সদস্য সারুখ হোসেন, সাইদুর রহমান, আরিফুল ইসলাম, মোমিনুল ইসলাম জানান, আমাদের কাছে থেকে নির্বাচনী ডিউটির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের ইউনিয়ন কমান্ডার সেফাউল হক ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দেবে বলে ৭০০ টাকা করে নিয়েছে।
এদিকে মোনাখালী ইউনিয়নের রশিকপুর গ্রামের বাদল শেখ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দল নেতা ফয়সাল মাহামুদ আমাদের সাথে নির্বাচনী ডিউটি দিতে টাকা নিয়েছে।
মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের ফাইমা বেগম বলেন, ইউনিয়ন কমান্ডার আবুল কাশেম আমার কাছ থেকে ৯শ টাকা নিয়ে আমাকে ভোটের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ করে দেয়। আমাকে সেসময় বলা হয়েছিল, নির্বাচন শেষে ৪ হাজার টাকা পাবেন। কিন্তু ৯ টাকা ঘুস দিয়ে সম্মানী পেয়েছি মাত্র ২১শ ৮৫ টাকা।
রশিকপুর গ্রামের আনোয়ার শেখ বলেন, আমাকে দিতে হয়েছে ৫শ টাকা। একই কথা বলেন বাবু শেখ নামের আরও এক আনসার সদস্য। বাবু শেখ বলেন, মহাজনপুর ইউনিয়নের প্রত্যেক আনসার সদস্যর কাছ থেকে ৫শ-৭শ টাকা করে ঘুস নিয়েছে সেফাউল হক নামের ইউনিয়ন আনসার কমান্ডার।
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন আনসার সদস্য জানান, উপজেলা কোম্পানী কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলমের যোগসাজসে ঘুস লেনদেন হয়ে থাকে। অভিযোগ অস্বীকার করে জাহাঙ্গীর আলম জানান, আনসার সদস্যদের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি।
মুজিবনগর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম জানান, সরকারি বরাদ্দের বাইরে সম্মানী দেওয়া যায় না। কেউ যদি বেশি টাকা দেওয়া হবে বলে আনসার সদস্যর কাছ থেকে অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা আনসার অ্যাডজুডেন্ট শাহাদাত হোসেন বলেন, আনসার সদস্যদের অভিযোগ লিখিতভাবে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।