পদ্মা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া আলমডাঙ্গার তিন শ্রমিককে এক মাস দশ দিনেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গত ৫ জুন পদ্মায় ডুবে যাওয়া ট্রলারে ২৭ জন শ্রমিকের মধ্যে আলমডাঙ্গার ৬ জন শ্রমিক ছিলেন। ভাগ্যের জোরে তিনজন জীবিত ফিরলেও তাদের সাথে যাওয়া অপর তিনজন নিখোঁজ থাকেন। এক মাস দশ দিনেও তাদের কোন খোঁজ মেলেনি। তিন পরিবারে আজও চলছে শোকের মাতম।
নিখোঁজ হওয়া তিনজনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গার আইলহাঁস ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের নুরুল হকের ছেলে সাহাবুল, একই গ্রামের আইনাল হকের ছেলে শিলন, তারাচাঁদ মন্ডলের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, আজিজুল হকের ছেলে একরামুল, লস্কর মন্ডলের ছেলে আমজাদ ও হানেফ মন্ডলের ছেলে মোমেন কাজের উদ্যেশে ফরিদপুর যান গত ৩১ মে। তারা ওইদিন খুব সকালে জেলা ফরিদপুরের বাইপাস সড়কের “আদম বাজারে” (কামলার বাজার) উপস্থিত হন। ফরিদপুর সদরের চর নাশিপুর গ্রামের মহাজন লালন ফকির ৬শ টাকা দিনমজুরীতে ওই ৬ জনকে কিনে নেন।
জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে লালন ফকিরের ছেলে সাকিল মোট ২৭ জন কামলাকে নিয়ে মাওয়া ঘাট থেকে ট্রলারে করে নদীর ওপারের চরের জমিতে বাদাম তুলতে নিয়ে যেত। প্রতিদিনের মত ৫ জুন সকালেও তারা ট্রলারে নদী পার হচ্ছিলেন। কিন্ত শয়তানখালি ঘাট এলাকায় পৌছানোর আগেই ২৭ জন কামলা নিয়ে ট্রলারটি নদীতে ডুবে যায়। পাশ দিয়ে যাওয়া অপর একটি ট্রলার ঘটনাস্থলে পৌছলে ৬ জন কামলা তাতে উঠে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্ত এই মর্মান্তিক ট্রলারডুবিতে ২১ কামলার মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা।
সৌভাগ্যবসত আলমডাঙ্গার একরামুল, আমজাদ ও মোমেন প্রাণে বেঁচে বাড়ি ফিরে এলেও হতভাগ্য সাহাবুল, শিলন ও রাজ্জাক নদীর অথৈ জলে নিখোঁজ থাকেন। আজও তাদের খোঁজ মেলেনি। কিন্ত তাদের পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করেন তারা মরেনি, বেঁচে আছেন।
নিখোঁজ সাহাবুলের স্ত্রী সখিনা বেগম জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম ছিলেন তার স্বামী। স্বামীকে হারিয়ে দুইটি সন্তান নিয়ে তিনি মহাসগারে পড়েছেন। তিনি বলেন, মারা গেলে তো তার লাশ উদ্ধার হবে। আমার বিশ্বাস সে বেঁচে আছে।
নিখোঁজ শিলনের পিতা আইনাল হক বলেন, আমার ছেলের ভাগ্যে কি ঘটেছে আল্লাহ একমাত্র জানে। আমরা ছেলের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আল্লাহ তুমি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও।