কৃমির সংক্রমণ হওয়া শিশুদের জন্য খুব স্বাভাবিক ঘটনা। তবে কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন শিশুর পেটে কৃমি হয়েছে।
অনেক সময়েই দেখা যায়, শিশুর মেজাজ ভালো থাকে না।
আর তার পায়ুদ্বারে ইরিটেশন, মাঝেমাঝে পেটে ব্যথা, সঙ্গে বমি। শিশুদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা দেখা দিলে অনেক বাবা-মা চিন্তা করেন শিশুর পেটের সমস্যা হয়েছে।
জেনে রাখা ভালো এসব সমস্যা পেটে কৃমির লক্ষণ হতে পারে। তবে আপনাকে জানতে হবে কৃমি কেমন হয়, এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।
কৃমির সমস্যা কেন হয়?
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ বললেন, সাধারণত মলমূত্র, নখের ময়লার মাধ্যমেই শিশুর পেটে কৃমির সংক্রমণ হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, শিশুরা খেলতে খেলতে মুখে হাত দেয়, এমনকি খেলনাও মুখে পুরে ফেলে। বাইরে হাঁটাচলার কারণে কৃমি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া শিশুরা হামাগুড়ি দিতে শুরু করলে বা নতুন হাঁটতে শেখার সময় থেকেই কৃমির সংক্রমণ শুরু হয়। তাই শিশু মাটিতে থাকার সময়ে একটু নজরে রাখুন।
৫ লক্ষণে বুঝবেন শিশুর কৃমি
সাধারণত শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে শিশুর আচরণে কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
আসুন জেনে নেই শিশুর কৃমি হওয়ার কিছু লক্ষণ-
১. ঘন ঘন পেটে ব্যথা ও খিদে কম পাওয়া।
২. খাবার খেলে যদি পেটে ব্যথা করে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৩. অনেক শিশু আবার অকারণেই থুতু ফেলতে থাকে বা থুতু ছিটায়।
৪. খিমচে দেয়, কামড়ে দেয়। কৃমির উপদ্রব বাড়লেই কিন্তু এ ধরনের লক্ষণ দেখা যায়।
৫. অনেক সময় মলের মাধ্যমেও কৃমি বেরিয়ে আসে। তাই স্টুলের দিকেও নজর রাখতে হবে।
পরীক্ষা করে দেখা যায়
শিশুর পেটে কৃমি হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য স্টুল এগজ়ামিনেশনও করানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এক দিনে নয়, পরপর তিন দিন মল পরীক্ষা করাতে হবে। তাতে কৃমি বেরোলে নিশ্চিত হতে পারবেন। তবে অনেক সময়ে এই পরীক্ষাতেও কৃমি ধরা পড়ে না। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে ওষুধ দিন।
চিকিৎসা
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. চয়ন গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ৩ বছর বয়স থেকে ৬ মাস পর পর শিশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। ১২ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত এই ওষুধ খাওয়ানো যায়। এ ছাড়া জরুরি হল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। কৃমির সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাও জরুরি। যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে
১. সন্তানের খাবার, পানি , এমনকি ন্যাপি বদলানোর আগেও হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করতে পারেন।
২. শিশুটি বাইরে থেকে খেলে বা ঘুরে এলে অবশ্যই ভাল করে সাবান দিয়ে তার হাত-পা ধুয়ে দিন।
৩. শিশুর নখ পরিষ্কার রাখতে হবে ও নিয়মিত নখ কাটতে হবে। খেয়াল রাখুন, সে যেন নখ না খায়। নখের কোণে যে ময়লা জমে, তার থেকেও কিন্তু কৃমি প্রবেশ করতে পারে শরীরে।
৪. ফল, আনাজপাতিও বাজার থেকে এনে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরে খেতে হবে।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা