হারানোর সাত বছর পর প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীরকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন স্বজনরা। ভাইকে বুকে টেন নিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন বড় ভাই আব্দুর রহমান।
গতকাল বুধবার বিকালে মেহেরপুরের গাংনী থানা পুলিশ ও বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীর (৩৫) কে তার স্বজনদের হাতে তুলে দেন।
জাহাঙ্গীর মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার নিলাম্বরপট্টি এলাকার মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে।
বড় ভাই আব্দুর রহমান বলেন, ৭ বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল মানসিক প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীর। মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজন জাহাঙ্গীরকে খুঁজতে সাত বছর পথে পথে ঘুরছিল। অবশেষে সৃষ্টিকর্তার দয়ায় এবং বিজিবি ও পুলিশের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী ভাই জাহাঙ্গীরকে আবার ফিরে পেলাম।
তিনি জানান, জাহাঙ্গীরের বয়স এখন ৩৫ বছর। ৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার পর সব কিছু ভূলে গেলেও রক্তের বাধন কখনও ছিন্ন হয়নি। স্বজনদের দেখা মাত্রই সে অতি সহজে চিনে নিয়েছে।
আব্দুর রহমান বলেন, সংসারের স্বচ্চলতা ফেরাতে জাহাঙ্গীর কুয়েতে গিয়েছিল। সেখানে দুই বছর থাকার পর মাথায় সমস্যা দেখা দেই। পরে বাড়ি এসে ঢাকাতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাবে ভেবে শিকল পরিয়ে রাখা হতো তাকে। আমি কাজের জন্য বাহারাইন যায়। সেখানে যাওয়ার পর আর ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি। জাহাঙ্গীর স্থানীয় একটি মাদ্রাসাতে হাফেজি পড়েছে। জাহাঙ্গীরকে গ্রহণের সময় বড় ভাবি ফুলবানু নেছা, ভাতিজা মূর্শেদ আলম, গণ্যমান্য ব্যাক্তি পান্নু শেখ উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরের ভাতিজা মূর্শেদ আলম বলেন, চাচা জাহাঙ্গীর সাত বছর আগে বাড়ি থেকে সবার অজান্তেই বের হয়েছিল। এরপর আর ফিরে আসেননি। আমরা অনেক খোঁজাখুজি করেছি, কিন্তু পাইনি। তার বাবা তাকে খুঁজে না পেয়ে এক সময় মারা যান। এ অবস্থায় গত ১৩ আগষ্ট আমাদের সিঙগাইর থানা পুলিশ আমাদের খোঁজ দেন। পুলিশের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে তাকে নিতে গাংনী থানায় আসি আমরা। সাত বছর পর চাচাকে পেয়ে আমরা খুব খুশি। এজন্য বিজিবি ও গাংনী পুলিশকেও ধন্যবাদ জানাই।
৪৭ বিজিবির খাঁসমহল বিওপি ক্যাম্প কমান্ডার শাহাবুদ্দিন জানান, গত (১১ আগষ্ট) দিবাগত রাত সাড়ে আটটার দিকে গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী খাঁসমহল গ্রামের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১৩৮ এর ৪ এস নিকট সন্দেহতীতভাবে ঘোরাফেরা করার সময় বিজিবির একটি টহল টিম আটক করে তাকে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সে কোনো কথা বলেনি। পরে গাংনী থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, প্রথমে তাকে জেল পলাতক কোনো দাগী আসামি ভাবা হয়েছিল। পরে তার দেওয়া তথ্য নিশ্চিত করতে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার সাথে যোগাযোগ করা হয়। ওই থানা পুলিশ এলাকায় গিয়ে বিস্তারিত শুনে ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে নিশ্চিত হন সে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। পরে পরিবারের লোকজন ও ওই এলাকার গণমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।