মেহেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এডহক কমিটিতেই চলছে ৮ বছর ধরে। তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার দায়িত্ব নিয়ে গঠিত এডহক কমিটি কাটিয়ে দিচ্ছেন বছরের পর বছর। তবে খুব বেশি খেলাধুলার দিকে মন নেই এ কমিটির।
বরাদ্দ আসলেও সেগুলো ঠিকমত ব্যায় হয়কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ক্রীড়াপ্রেমীদের। এর মধ্যে আব্দুর রকিব নামের একজনকে পিয়ন এবং মনিরুল ইসলাম মনি নামের আরেকজনকে স্থায়ীভাবে নৈশ প্রহরী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও স্টেডিয়াম মার্কেটের দোকানও বরাদ্দ দিয়েছেন এই কমিটি।
তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি অচিরেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন দিয়ে ক্রীড়াঙ্গনকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের মান বাড়াতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে যুব সমাজ খেলাধুলা ছেড়ে মাদকাসক্তের দিকে ধাবিত হবে। এছাড়া মামা আতাউল হাকিম লাল মিয়া ও ভাগ্নে আনোয়ারুল হক শাহীর হাত থেকেও রক্ষার করার দাবি জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে।
২০১২ সালের ৫ এপ্রিল নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নানা জটিলতায় পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক সভাপতি হলেও নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ জন সদস্য প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটি ২০০৮ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ আবলু।
পরবর্তি নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা আতাউল হাকিম লাল মিয়াকে সদস্য সচিব করে ১২ সদস্যর এডহক কমিটি করা গঠন করা হয়। এই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বিশ্বাস, মো: আক্কাস আলী, মো: মাহফুজুর রহমান রিটন, সাইফুল ইসলাম পল্টু, মো: আতর আলী, আনোয়ারুল হক শাহী, এহসানুল কবির আরিফ, মো: হাসানুজ্জামান হিলন, মো: শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টু।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এডহক কমিটির ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এ নিয়ে ক্রীড়াপ্রেমীরা মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান, সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী পালন করলেও কোন কাজে আসেনি। বিভিন্ন সময় দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকরা আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত আর বাস্তবায়ন হয়নি।
২০১৩ সালে তৎকালিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আলমগীর হোসেন ঘোষিত নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ভোট গ্রহনের তারিখ ঠিক করলেও পরবর্তিতে অদৃশ্য কারনে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।
এডহক কমিটির সদস্য ও বর্তমান মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, এডহক কমিটির গঠন হওয়ার পর আমাকে ৪-৫ টা মিটিংয়ে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু পরে অজানা কারনে আর আমাকে ডাকা হয় না। আমি একজন সদস্য হিসেবে সব সময় নির্বাচনের বিষয়ে সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। নির্বাচন কেন অনুষ্ঠিত হয়নি আমার জানা নেই। আমি চাই যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচনের মাধ্যেমে নির্বাচিত কমিটি গঠন হোক। একই সাথে মেহেপুরের যুবসমাজকে খেলায় ফিরিয়ে আনা হোক। তা না হলে মাদকের ছোবল থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা কঠিন হবে।
এডহক কমিটির আরেক সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস বলেন, মামলা মোকাদ্দামার কারনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তারপরও জেলা প্রসাশক যদি মনে করেন তাহলে নির্বাচন সম্ভব। এছাড়াও তিনি বলেন, এর আগে যে নির্বাচিত কমিটি ছিল বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিল। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিনিয়ত খেলা-ধুলাসহ সকল কার্যক্রম যথাযথভাবে চলেছে, এখনো চলছে। আপনারা জানেন করোনা পরিস্থিতির আগে জেলা স্টেডিয়াম খেলা-ধুলায় মুখরিত থাকতো। এটা একটা চক্র ভালো চোখে দেখেনা।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালেহ উদ্দিন আহমেদ আবলু বলেন, একটি পরিবারের কাছে বন্দী হয়ে আছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। ক্ষমতাসীনদের ব্যবহার করে মামা (লাল মিয়া), ভাগ্নে (শাহী) ও(আরিফ) একতরফা রাজত্ব করছেন ক্রীড়া সংস্থায়। কাগজে কলমে সব কিছু ঠিক থাকলেও বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য আনোয়ারুল হক শাহীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সদস্য সচিব আতাউল হাকিম লাল মিয়া ও সদস্য আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য সচিব আতাউল হাকিম লাল মিয়া ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, আমরা নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে আর সম্ভব হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।